সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৪:৩৭ পিএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪০ পিএম
কিশোরগঞ্জের নিকলী বেরিবাঁধ এলাকায় পর্যটকদের ঢল। প্রবা ফটো
বর্ষার ভরা মৌসুমে হাওরে সাগরের মতো ঢেউ খেলানো থইথই পানি। এই সৌন্দর্য উপভোগে কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় পর্যটকদের ঢল নামে। দিগন্ত বিস্তৃত পানির মধ্যে নৌকা আর ট্রলার নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা যায় হাজারো স্থানীয় ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষদের। পর্যটকদের আগমনে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত চার উপজেলা- নিকলী, মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম। এর মধ্যে একমাত্র নিকলী সদরের সঙ্গে ঢাকা ও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। অন্য তিন উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা লঞ্চ।
২০০০ সালে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষার ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় সরকার পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ তৈরি করে। এ ছাড়া উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের ভাঙনরোধে রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ। হাওরবেষ্টিত এই জলাভূমি কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ে ওঠে ভ্রমণবিলাসী ও সৌন্দর্য প্রেমিকদের আরাধ্য স্থান। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছরই সারা দেশ থেকে হাজারো মানুষ বর্ষা মৌসুমে ছুটে আসেন নিকলীর হাওরে। তাই এ উপজেলাকে বলা হয় ‘মিনি পর্যটনকেন্দ্র’। বিশাল জলরাশি ও দিগন্ত ছোঁয়া নান্দনিক হাওরের অপরূপ দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেঁধে মোটরবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন এখানে। পর্যটকদের আগমনে উপজেলার কয়েক হাজার পরিবারের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে নিকলীর বেড়িবাঁধে দেখা যায়, চারদিক পানিতে থইথই করছে। যেদিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। নতুন পানির ঢেউ আর দুরন্ত বাতাসে মনে দোলা জাগায়। ছুটির দিনগুলো তথা শুক্র ও শনিবার নিকলীর বেড়িবাঁধ এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন হাজারো পর্যটক। হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশির বুকে নৌকা, ট্রলার আর স্পিডবোট নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে যায় সবাই। কেউ চাঁদনী রাতে ট্রলার নিয়ে হাওরে রাত যাপনের জন্য আসেন। অনেকে আবার হাওরের পূর্ণিমা দেখতে নিকলীর আবাসিক হাটেলগুলোয় রাত কাটান।
নিকলীর বেড়িবাঁধ এলাকায় গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন সালিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে নিকলী হাওরে ঘুরতে এসেছি। ট্রলারে করে হাওর ঘুরলাম। অনেক ভালো লেগেছে। পরিবেশটা মনে রাখার মতো।’
নরসিংদী থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা খাইরুল মিয়া বলেন, চারটি বাইকে আমরা আট বন্ধু নিকলী বেড়িবাঁধে ঘুরতে এসেছি। হাওরে নতুন পানিতে ট্রলারে করে হাওরে ঘুরলাম। অনেক আনন্দ পেয়েছি।
নিকলীর স্থানীয় বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন, ছুটির দিনগুলোয় হাজারো পর্যটক আসেন। এ জন্য করগাঁও থেকে নিকলী পর্যন্ত প্রচুর যানজট হয়। তবুও পর্যটকের আগমনে আমরা খুশি। তাদের অতিথি হিসেবে দেখি। তারা যেন হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে- এই চেষ্টাই থাকে আমাদের।
পর্যটকদের ট্রলারে করে হাওরে ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন কাদের মিয়া। তিনি বলেন, সারা বছর বর্ষার অপেক্ষায় থাকি আমরা। এ সময় হাওরে অনেক মানুষ আসে। তাদের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে এখানকার কয়েক হাজার মাঝির সংসার চলে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হাওরের পানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের ভিড়।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, নিকলীর হাওরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। বর্ষায় এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বেড়িবাঁধ এলাকায় সিভিল ও পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন। এখানে যারা আসেন তাদের ভ্রমণ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সব সময় পুলিশ সচেষ্ট থাকে।