শরীয়তপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
নিখোঁজের দুই দিন পর শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের টয়লেট থেকে বাবুল বেপারি নামে এক রোগীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে হাসপাতালের তৃতীয় তলার একটি টয়লেট থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। বাবুল বরিশালের মুলাদী থানার তয়কা গ্রামের মৃত আলী বেপারির ছেলে। তিনি একজন নির্মাণশ্রমিক ছিলেন।
পুলিশ, স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে বাবুল বেপারি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন রাতে বৃদ্ধা মা রোকেয়া বেগম বাবুলের সঙ্গে হাসপাতালে ছিলেন। রাত ২টার দিক থেকে রোকেয়া বেগম ছেলে বাবুলকে হাসপাতালে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে হাসপাতালের নার্সকে জানালে তারা তেমন গুরুত্ব দেননি। পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে আবারও রোকেয়া বেগম ছেলে বাবুলকে খুঁজতে থাকেন। ছেলেকে খুঁজে না পাওয়ায় হাসপাতালের নার্সরা বৃদ্ধাকে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তিনি বাড়ি চলে যান এবং ঘটনা সবাইকে জানান। ঘটনা জানার পর রোকেয়া বেগমসহ স্বজনরা বাবুলকে খুঁজতে খুঁজতে আবারও সদর হাসপাতালে চলে আসে। বাবুলকে খুঁজে না পেয়ে রোকেয়া বেগমসহ স্বজনরা শুক্রবার সারা রাত হাসপাতালেই ছিল।
শনিবার সকালে এক রোগীর স্বজন টয়লেটের ভেতর বাবুলের মরদেহ দেখতে পায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে টয়লেটের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১টার দিকে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
জাকির হোসেন নামে এক লোক মারামারির ঘটনায় ৩ জুলাই থেকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ভর্তি ছিলেন। তার পাশের বেডেই চিকিৎসাধীন ছিলেন বাবুল। জাকির হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ২টার দিকে বাবুলের মা বলতেছে তার ছেলেকে সে খুঁজে পাচ্ছে না। তখন আমরাও বাবুলকে খুঁজে পাইনি। হাসপাতালের লোকজনকে জানানোর পরেও তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আজ দুই দিন পর টয়লেটে তার মরদেহ পাওয়া যায়। হাসপাতালের টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। পরিষ্কার করতে গেলেও রোগীটাকে পাওয়া যেত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রোগীর সঙ্গে আশি বছর বয়স্ক তার মা ছিলেন। তিনি সঠিকভাবে বলতে পারেননি বিধায় হয়তো বিষয়টি কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত রিপোর্টে যদি কারও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেঝবাহ উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘হাসপাতালের তৃতীয় তলার টয়লেট থেকে এক রোগীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’