রাজবাড়ী সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪ ১২:১০ পিএম
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের শালমারা গ্রামে ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনের নির্মাণাধীন তিনতলা বািড়। শুক্রবার দুপুরে তোলা। প্রবা ফটো
ওয়াসার প্রকৌশলী আল আমিন ঢাকায় একাধিক জমি-ফ্ল্যাট, গাজীপুরে রিসোর্ট, রাজবাড়ীর গ্রামে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান বাড়ি, গরুর খামার, বাড়িতে বিদেশি কুকুর, কবুতর, শত বিঘা জমিসহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন। মাত্র ৫ বছর চাকরি করেই এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
আল আমিনের অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তি অনুসন্ধানে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে গত ৯ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের নিকট অভিযোগ করেন বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের মৃত শেখ মোয়াজ্জেমের ছেলে ঢাকা কারওয়ানবাজার ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের প্রকৌশলী আল আমিন। ঢাকার সাভারে ছয় এবং মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলকায় ১১ তলা ভবন, একটি ফ্ল্যাট, গাজীপুরে রিসোর্ট ও গ্রামের বাড়ি শালমারাতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা আধুনিক নকশার নির্মাণাধীন ভবন, গরুর খামার, একাধিক অবৈধ স্থাপনা, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার এবং তার পরিবারের নামে অস্বাভাবিক অঙ্কের অর্থ রয়েছে। তার বাড়িতে ছোট একটি টিনের ঘর রয়েছে। বাড়ির শরিকদের জোরপূর্বক সরিয়ে আলিশান বাড়ি তৈরি করছেন। গ্রামের বাড়িতে বিদেশি কুকুর, কবুতর ও গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। সরকারি খাল দখল করে বাড়িতে প্রবেশের জন্য রাস্তা তৈরি করেছেন। রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে খালের পাশের কয়েকটি গাছ কেটেছেন প্রকাশ্যে দিবালোকে। তার বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি থানায় গাছ চুরির মামলা হয়। এ ছাড়াও এলাকায় শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। বাদী আব্দুর রহমান প্রকৌশলী আল আমিন ও তার পরিবারের নামে থাকা অবৈধ সম্পত্তি অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের প্রকৌশলী আল আমিনের বাড়িতে গেলে প্রবেশপথেই দেখা মেলে বিদেশি কুকুর। বাড়িতে তিনতলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। পাশেই রয়েছে গরুর খামার।
প্রকৌশলী আল আমিনের বিষয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা বলেন, কয়েক বছর চাকরি করেই তার ভাগ্য খুলেছে। জানতে পেরেছি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলায় ১০ শতাংশ জমির ওপর ১২তলা ভবনের দুটি ফ্ল্যাট, তার পাশেই বোনের নামে ৮ শতাংশ জমি, দোতলা ভবন, আশুলিয়ার জামগড়াতে জমি, হেমায়েতপুর, ফরিদপুরের এক বন্ধুর সঙ্গে জমি, গাজীপুরের জয়দেবপুরে রিসোর্ট রয়েছে। দেখতেই পাচ্ছেন, তিনি গ্রামের বাড়িতে আলিশান বাড়ি, মাঠে কয়েকশ বিঘা জমি ক্রয় ও গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। সরকারি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসেন তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
টোকন নামে স্থানীয় এক ফ্রিজের মিস্ত্রি বলেন, আল আমিন আর আমার বাড়ি পাশাপাশি ছিল। তিনি আমার বাড়ির জায়গা কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় আমাকে প্রায় দ্বিগুণ খরচে বাড়ি করে দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, আল আমিনের বাবা ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করত। অভাবের সংসার ছিল তার। কিন্তু আল আমিন ওয়াসায় চাকরি পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে বাড়িতে থাকা টিনের ঘরের সামনে আলিশান তিনতলা ভবন নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন। এ ছাড়াও বাড়িতে গরুর খামার, বিদেশি কুকুর, কবুতর পালন করেন। সরকারি খাল দখল করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ তৈরি করেছেন। সরকারি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসেন, চলেন রাজার হালে। মাঠে জমি পেলেই কিনে নেন। শুনেছি ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদ রয়েছে। মাত্র কয়েক বছর চাকরি কীভাবে এত সম্পদ গড়েছেনÑ এসব ভেবে বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা।
কথা হয় প্রকৌশলী আল আমিনের মা হোসনে আরা বেগম রুবির সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়িতে যে বিল্ডিং করা হচ্ছে তা আমার স্বামীর টাকায়। গরুর খামার আমাদের আগেও ছিল। খামার ও অন্যান্যভাবে প্রতি মাসে আমি ২ লাখ টাকার মতো আয় করি। বাড়ির পথ নিয়ে বিরোধের কারণে আমার ছেলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আল আমিন ২০০৯ সালে ওয়াসায় যোগ দেয়।
তিনি আরও বলেন, ছেলে মাঝেমধ্যে সরকারি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসে। প্রতি বছর বিদেশে যায়। এবারও বিদেশে যাবে। এ কারণে বাড়িতে আসতে দেরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় অভিযোগ দাতা আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাত্র কয়েক বছরে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কীভাবে এত সম্পদ অর্জন করেছেন, তা জানতেই দুদকে অভিযোগ করেছি আমি।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়াসার প্রকৌশলী আল আমিনের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রেজাউল করিমের মোবাইলেও একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।