চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৪৬ এএম
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২২ ১০:৫৮ এএম
চট্টগ্রাম বন্দর ভবন। ফাইল ফটো
আমদানি-রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার স্ক্যানিংয়ের দায়িত্ব কাস্টম হাউসের। এজন্য কাস্টম হাউসই স্ক্যানার সংগ্রহের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে স্থাপন করে। এটাই দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। সেই পুরোনো রেওয়াজ পরিবর্তন করে এবার দুটি স্ক্যানার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, কাস্টম হাউসের জন্যই স্ক্যানার দুটি কেনা হচ্ছে। কিন্তু কাস্টম হাউস বলছে, বন্দরের স্ক্যানার কেনার উদ্যোগ সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহল নয়। বরং বন্দরে স্থাপনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে স্ক্যানার সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে। শিগগির স্ক্যানারগুলো বন্দরে বসানো হবে।
এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মূলত স্ক্যানার ব্যবহার করে কাস্টমস। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই স্ক্যানার কেনার কথা। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন স্ক্যানার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। স্ক্যানারগুলো গেটে প্রতিস্থাপনের পর কাস্টম হাউসে হস্তান্তর করা হবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এনবিআর থেকে বেশ কয়েকটি স্ক্যানার কেনার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য সেখান থেকে চারটি স্ক্যানার প্রদান করা হবে। আগামী জুনের আগেই স্ক্যানারগুলো কাস্টম হাউস পাবে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের স্ক্যানার কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ কেন স্ক্যানার কিনছে তা আমার জানা নেই। আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিরীক্ষার জন্য কাস্টমস কনটেইনার স্ক্যানিং করে। কিন্তু বিস্ফোরক কোনো কিছু বন্দরে আনা-নেওয়া হচ্ছে কি না তা তদারক করা হয় না। বন্দর কর্তৃপক্ষ হয়তো ওই-সংক্রান্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্যই স্ক্যানারগুলো কিনছে।’
বন্দরসূত্রে জানা যায়, গত মার্চে দুটি এক্স-রে স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ দুটি স্ক্যানার কেনার জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮৯ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তারা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্ক্যানারগুলো কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বন্দরের।
এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (নিরাপত্তা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা আরিফ-উর রহমান খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করে ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সরকারি অনুমোদন পেলে এরপর বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’
বন্দর থেকে স্ক্যানারগুলো কাস্টমসের জন্য কেনার কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) কোডের আওতায় এ দুটি স্ক্যানার কিনতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইউএস কোস্টগার্ডের কড়াকড়ির কারণেই এ দুটি স্ক্যানার কিনতে বাধ্য হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ইউএস কোস্টগার্ডের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ওই সময় তারা বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি দূর করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছিল। এর দুই বছর পর ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সংস্থাটির তিন সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধি দল বন্দরে আসে। এ সময় তারা বন্দরের নিরাপত্তা বিশ্বমানে উন্নীত করতে বন্দরের প্রতিটি গেটে স্ক্যানার বসানোর পাশাপাশি ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
আইএসপিএস কোড হলো একটি ফ্রেমওয়ার্ক যেটি নিশ্চিত করার মাধ্যমে বন্দর ও জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। যেখানে ১১টি নির্দেশনা প্রদান করে সেগুলো নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনার প্রথম দফায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কাঠামোর মাধ্যমে নিরাপত্তা হুমকি শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। আইএসপিএস কোডের শর্ত পূরণ করতেই এ দুটি স্ক্যানার কিনতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।