বিসিএসের প্রশ্নফাঁস
আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪ ১৫:০৩ পিএম
নোমান সিদ্দিকী। প্রবা ফটো
বিসিএসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের একজন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বাসিন্দা নোমান সিদ্দিকী। তার বাড়ি উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঈদগাহ এলাকায়। মো. আবু তাহের ও হালিমা খাতুন দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় নোমান। বাবা আবু তাহের বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। বর্তমানে মা হালিমা খাতুনকে নিয়ে থাকছেন রাজধানীর গুলশান এলাকায়। এলাকার মানুষের কাছে নোমান মিয়া নামে পরিচিত নোমান সিদ্দিকীর রামগতিতে রয়েছে অঢেল সম্পদ। মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন মাদ্রাসাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এলাকার মানুষদের বলে বেড়াতেন, তিনি সাবেক এক মন্ত্রীর নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করার কারণেই এত অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোমান সিদ্দিকী স্থানীয় চরমেহার আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এ সময় সেনাবাহিনী থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) সংযুক্ত হয়ে এক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে জড়িয়ে পড়েন প্রশ্নফাঁসসহ নানা অপকর্মে। তার গ্রেপ্তারের খবরে লক্ষ্মীপুরের রামগতির গ্রামের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।
নোমান সিদ্দিকী ২০২২ সালেও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দুই মাস কারাগারে ছিলেন। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবার যুক্ত হন একই কাজে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সেনাবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ চাকরি ছেড়ে হঠাৎ করেই যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন নোমান। দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার গুলশানে বসবাস করলেও বছরে দুয়েকবার এলাকায় আসতেন। নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন হালিমা খাতুন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গ্রামে এলেই বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা, মাজারসহ গরিব-দুঃখীদের অকাতরে দান-দক্ষিণা করতেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে করেছেন একতলা বাড়ি। রাজধানীতে দুই সন্তানকে পড়াচ্ছেন নাম করা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। এ ছাড়া নামে-বেনামে আছে অঢেল সম্পত্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্ঠ একাধিকজন বলেন, এলাকায় আসলেই তিনি তার নানান অর্জনের গল্প করতেন। ঢাকার গুলশান, উত্তরা ও মিরপুর এলাকায় তার নামে চারটি ফ্ল্যাট এবং পূর্বাচলে রয়েছে পাঁচ কাঠার একটি প্লট। নামে-বেনামে আছে কয়েকটি ব্যাংকে অঢেল টাকা। গেল কোরবানির ঈদে দুটি গরু কোরবানি দিয়ে একটি বিলিয়েছেন এলাকায়। প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছেন ঈদগাহ ও মাদ্রাসা।
রামগতির চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী বলেন, নোমানের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। তিনি প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানি। আমার এলাকার ছেলে এমন জঘন্য কাজ করবে, তা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের পর এ নিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজাহারে আসামি হিসেবে নোমান সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। এ বিষয়ে আমরাও খোঁজখবর নিচ্ছি।
প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর নোমান সিদ্দিকীকে চেনায় রামগতির অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট করতে থাকেন। নাম-ঠিকানা প্রকাশ হওয়ার পর নোমান সিদ্দিকীর আলোচিত বাড়ি দেখতে অনেকেই আসছেন।
জানা গেছে, ১২ বছর ধরে পিএসসির অধীনে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকীসহ ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৯ জুলাই মঙ্গলবার তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এর আগে রাজধানীর পল্টন থানায় হওয়া এক মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত নোমান সিদ্দিকীসহ ১০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এদিন সকালে এ মামলায় গ্রেপ্তার আরও ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। কারাগারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া সাতজনের মধ্যে ছিলেন রামগতির নোমানও। তাকেসহ অপর ৯ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। পরে আসামিদের আইনজীবী তাদের জামিন চেয়ে আবেদন করলে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।