মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৬ পিএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪ ২২:২৪ পিএম
কিশোরগঞ্জের বৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের বাসিন্দা সবুজ ভূঁইয়ার দুম্বার খামার। প্রবা ফটো
কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। একান্ত ইচ্ছার বশে সৌদিফেরত সবুজ আরবের দুম্বা খামার গড়ে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তার খামারে দুম্বার পাশাপাশি আছে দেশি ছাগল।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা সবুজ ভূঁইয়া। বছর তিনেক আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। সৌদিতে থাকার সময় সেখানকার দুম্বার খামার দেখে তার মনে ইচ্ছা জাগে, দেশেও এমন কিছু করার। সেই ইচ্ছা থেকেই দেশে এসে করেন দুম্বার খামার। বর্তমানে সবুজ একজন সফল উদ্যোক্তা। টার্কি জাতের এই দুম্বা বিক্রি করে সবুজের মাসিক আয় বর্তমানে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেই মূলত নিজের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার এই ভিন্নধর্মী খামার দেখে দুম্বা পালনে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। দুম্বা পালনে সবুজকে সার্বিক পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। উদ্যোক্তা সবুজ জানান, অনলাইনের মাধ্যমে দেশজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে তার গ্রাহক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বড় করতে চান তার এই খামার।
উদ্যোক্তা সবুজ ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকার একটি খামার থেকে টার্কি জাতের দুই মাস বয়সি তিনটি দুম্বার বাচ্চা এনে প্রথমে শুরু করি। বাচ্চাগুলো সাত-আট মাস বয়স থেকেই প্রজনন শুরু করে। বর্তমানে আমার খামারে ২০টিরও বেশি দুম্বা রয়েছে। আগামী বছরের কোরবানি ঈদের জন্য খামারে শতাধিক দুম্বা বিক্রির উপযোগী করে তুলতে পারব। এ ছাড়া বর্তমানেও বিক্রি ভালো। খামারের একেকটি দুম্বা বিক্রি করছি এক থেকে দেড় লাখ টাকায়। গত তিন বছরে অর্ধশতাধিক দুম্বা বিক্রি করেছি। দুম্বার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি, ফলে তেমন বেগ পেতে হয় না। দুম্বার পাশাপাশি ছাগলের খামারও রয়েছে। এ খামারে আফ্রিকান বোয়ার, তোতাপুরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল রয়েছে।’
সবুজ ভূঁইয়া আরও বলেন, দুম্বা পালন একটি লাভজনক পেশা হতে পারে। দেশে দুম্বার মাংসেরও চাহিদা অনেক। দুম্বা সাধারণত পাকচং ঘাস আর ভুসি খেয়ে থাকে। ১৪ থেকে ১৫ মাসে দুইবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চা দুধ ছাড়ার পর ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। মূলত আমাদের ‘গটফার্ম’ ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমেই বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। সেগুলো আমরা ঠিকানামতো পাঠিয়ে দিই। এ ছাড়া অনেকে নিজে এসেও নিয়ে যায়। বাণিজ্যিকভাবে দুম্বার খামার করে আমার আয় বেশ ভালো।
এলাকাবাসী জানায়, তারা আগে শুধু দুম্বার নামই শুনেছে। সরাসরি দেখেনি কোনোদিন। সবুজের খামারে এসে এখন তা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এখান থেকে দুম্বা কিনে নিয়ে যায়। তার এই সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই দুম্বার খামার দিতে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে। প্রতিদিন অনেক লোকজন আসে তার এই খামার দেখতে।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সাইফুল আজম বলেন, ‘সবুজের দুম্বার খামার প্রান্তিক খামারিদের জন্য অনুকরণীয় একটি বিষয়। তার সাফল্য অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। দুম্বার প্রধান খাবার ঘাস। দুম্বা সাধারণত কৃমি ছাড়া অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয় না। উৎপাদন খরচ খুবই কম। ফলে দুম্বার খামার অতি লাভজনক।’
খামারি সবুজকে সব রকমের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য যে কেউ দুম্বার খামার করলে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।’