× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জয়পুরহাট

কার স্বার্থে চিরি নদীতে সড়ক ছাড়া নতুন সেতু

চম্পক কুমার, জয়পুরহাট

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪ ১৪:৪৬ পিএম

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪ ২২:২৪ পিএম

জয়পুরহাটের মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের মহুরুল গ্রামের চিরি নদীর দুই পাশে কোনো রাস্তা না থাকার পরেও নির্মাণ করা হচ্ছে এ সেতুটি। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

জয়পুরহাটের মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের মহুরুল গ্রামের চিরি নদীর দুই পাশে কোনো রাস্তা না থাকার পরেও নির্মাণ করা হচ্ছে এ সেতুটি। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

একটি সেতু থেকে আনুমানিক ৪০০ মিটার দূরত্বে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি সেতু। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে কোটি টাকার ওপর। তবে এই সেতুর দুই পাশে চলাচলের জন্য নেই কোনো রাস্তা। একপাশে বাড়িঘর, অন্যপাশে ফসলি মাঠ। জয়পুরহাট জেলা সদরের মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের মহুরুল গ্রামের চিরি নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির কাজ বাস্তবায়ন করছে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়।

পিআইওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহুরুল গ্রামের ওবায়দুলের বাড়ির পাশে চিরি নদীর ওপর ১৫ মিটার গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় এই সেতুর প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪৭ টাকা। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের ৫ মে। কাজ শেষ হওয়া কথা আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি। সেতু নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে মেসার্স হোসাইন ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে মহুরুল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চিরি নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যে সেতুর দুই পাশের পিলার দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুটির কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর পশ্চিম পাশে মাটি দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করেছে। সেতুটির পূর্বদিকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরত্বে এই নদীর ওপর আরও একটি সেতু রয়েছে। পাঁচ বছর আগে নির্মিত সেতুটি দিয়ে স্থানীয় মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া নতুন করে নির্মাণ করা সেতু থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আরও একটি সেতু রয়েছে। নতুন সেতুটির জন্য নেই কোনো রাস্তা। এর দক্ষিণে মহুরুল গ্রামের আশরাফ আলীর কলার বাগান এবং উত্তর দিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।

কথা হয় মহুরুল গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, এই গ্রামে ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমানের বাড়ি। তিনি বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের (উপসচিব) দায়িত্বে রয়েছেন। তার ডাকনাম লিটন। গ্রামের সবাই তাকে এই নামেই চেনেন। এই কর্মকর্তার গ্রামের বাড়িতে তার মা-বাবা ও বড় ভাই বসবাস করেন। তার বড় ভাই মাহফিজার রহমান মহুরুল দাখিল মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষক। নতুন করে নির্মাণ করা ওই সেতুর উত্তর দিকের ফসলি মাঠে মোস্তাফিজার রহমানদের পৈতৃক ৪৫-৫০ বিঘা জমি রয়েছে। সেতুর উত্তর দিকে সেতুর মুখের সামনেই তাদের তিন বিঘা জমি পড়েছে। সেতুর দুই পাশে চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সেতু নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করতে এসে রাস্তা না থাকায় সেতু নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছিলেন। পরে অবশ্য রাস্তা ছাড়াই সেতুটি নির্মাণের স্থান চূড়ান্ত করা হয়। 

কথা হয় মহুরুল গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সেতুর দক্ষিণ দিকের মুখে চিরি নদীর ওপর হামার (আমার) দশ শতক জমি আছে। সেই জমিত কলা লাগাচি। বিরিজের (ব্রিজ) জন্নি (জন্য) হামার ওই জমির কিছু অংশ দেওয়া লাগবে। ওই বিরিজ দিয়ে খালি হামাগরে ওই পাড়ার উবগারটা হবে, মানে পার হওয়া হবে। খালি আবাদ-ফসল পার করার জন্য বিরিজ। তা ছাড়া কোনো রাস্তা নাই তো।’

এখন যে ব্রিজ আছে তা দিয়েই তো ফসল পারাপার করা যাবে, তাহলে আবার আরেকটি ব্রিজ হচ্ছে কেনÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হামি বিরিজ করার সময় বাধা দিচি। কিন্তু ওরকরে কাছে প্যারে উঠপার পারিনি। ওরা যা পারে তাই করুক। সরকারের টাকা বেশি হচে। রাস্তা ছাড়াই বিরিজ করোচে। এইদিক দিয়ে ফসল পার করতে অ্যানা ঘোরা লাগবে, আর ওইদিক দিয়ে সোজা হবে।’

গ্রামের বাসিন্দা আবু কালাম বলেন, ‘নদীর ধার দিয়ে, আবার মাঠের সরু আইল দিয়ে অনেক ছেলে-মেয়ে আমাদের গ্রামের মাদ্রাসায় আসে। এ কারণে মাদ্রাসার সুপার তদবির করে সেতুর বরাদ্দ এনেছেন। লিটনের (মোস্তাফিজার) বড় ভাইও ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনিও তদবির করেছেন। সেতুটি হলে আমাদের পাড়ার অনেক মানুষের উপকার হবে।’ গ্রামের মানুষের জন্য একটি সেতু তো আছে, সেই সেতু দিয়ে আপনারা চলাচল করেন না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই সেতুটি একটু দূরে হয়। এতে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীর কষ্ট হয়। আমাদেরও মাঠের ফসল আনা-নেওয়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’ 

মঙ্গলবার দুপুরে মহুরুল দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে সুপারিনটেনডেন্টকে তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। সহ-সুপার মোকারম হোসেন বলেন, সুপার সাহেব চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন। আমাদের মাদ্রাসায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর বাড়ি মুহুরুল, চক মোহন, উত্তর নুরপুর-দক্ষিণ নুরপুর, উত্তর কান্দি-দক্ষিণ কান্দি, পালি গ্রামে। তবে নদীর পানি ভেঙে কাউকেই মাদ্রাসায় আসতে হয় না। কান্দি গ্রামের ছেলেমেয়েরা দুর্গাদহ রোডের পাকা রাস্তা দিয়ে এসে সামান্য ইটের সলিং রাস্তা দিয়ে মাদ্রাসায় আসতে পারে। আর খরার মৌসুমে ওই গ্রামের ছেলেমেয়েরা নদীর পাড় দিয়ে মাদ্রাসায় আসে। ওই সেতু হলে সেটি দিয়ে তারা আসতে পারবে। আর সেতুটি এই গ্রামবাসীর উপকারে আসবে। 

প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমানের বড় ভাই মাদ্রাসা শিক্ষক মাহফিজার রহমান বলেন, নতুন করে নির্মাণ হওয়া সেতুর উত্তর দিকে মাঠে আমাদের ৪৫-৫০ বিঘা জমি আছে। এ ছাড়া সেতুর উত্তর দিকে মুখ বরাবরে আমাদের তিন বিঘা জমি পড়েছে। আমাদের গ্রামের দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে মাদ্রাসার সুপার সেতু নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলেন। 

জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই স্থানটি সচিব মোস্তাফিজার স্যার নির্ধারণ করেছেন। আর সবকিছু নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন মহুরুল মাদ্রাসার সুপার শাহীন হুজুর। বর্তমানে কোনো রাস্তা নেই। তবে ব্রিজ হওয়ার পর প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা হবে। সেরকম ভাবে পরিকল্পনা করা। মূলত উপসচিব মোস্তাফিজার রহমান স্যারের সুপারিশে এই কাজ হচ্ছে। বড় কেউ না থাকলে আমি ব্রিজ দিতাম না। এখন উনি লিখিত কোনো কাগজ দিয়েছেন কি-না তা আমার জানা নেই। ব্রিজটি হলে মূলত ওই গ্রামের মানুষের মাঠের ফসল সহজেই বাড়িতে তুলতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে কল করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান। এরপর তিনি আর কল রিসিভ করেননি। পরে আবারও খুদে বার্তা পাঠানো হলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা