শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ২২:২৭ পিএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪ ২২:২৭ পিএম
ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম। প্রবা ফটো
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম কাজ না করে প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। আর গত সোমবার সকাল থেকে সেই প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় বদলি হওয়া শরণখোলার ইউএনও জাহিদুল ইসলাম আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত পাঠিয়েছেন। সেই টাকায় উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের টোলশেড মেরামত ও সাউথখালী ইউনিয়নের ড্রেন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। তবে কে এই কাজ করাচ্ছেন বা কে তদারকি করছেন, সে ব্যাপারে প্রশাসন বা ঠিকাদার কেউই মুখ খুলছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম শরণখোলায় থাকাকালীন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হাটবাজার রক্ষণাবেক্ষণের রাজস্ব খাতের ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় চারটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলোÑ মধ্য রায়েন্দা ইউনিয়নের রায়েন্দা বাজারের সবজি মার্কেটের নতুন টোলশেড নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার দুটি প্রকল্প, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের খোন্তাকাটা বাজারের ড্রেন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকার ও সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারের ড্রেন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকার প্রকল্প।
পরে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ড্রেন নির্মাণের প্রকল্পটি গোপনে বাতিল করে সমপরিমাণ অর্থে ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের দুটি টোলশেড মেরামতের আলাদা প্রকল্প তৈরি করেন। এরপর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম একাই স্বাক্ষর করে রেজুলেশন করে ওই প্রকল্প অনুমোদন দেখান। পরে দুটি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা কাজ না করেই উত্তোলন করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে উপজেলার রাজাপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুটি টোলশেডের পিলারে সিমেন্ট-বালুর প্রলেপ (পলেস্তারা) দিচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। আরেকটি টোলশেডের পুরোনো টিন খুলে ফেলা হয়েছে।
হঠাৎ করে কাজ শুরু হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টোলশেডের পাশের ব্যবসায়ী কামাল মুন্সি ও সঞ্জয় গাইন বলেন, সোমবার সকাল থেকে দেখছি টোলশেডের কাজ চলছে। কে করাচ্ছে, তা জানি না।
নির্মাণমিস্ত্রি মো. আলামীন বলেন, আমাদেরকে ফয়সাল নামে একজন সাব-ঠিকাদার কাজ করার জন্য চুক্তি করেছেন। তবে তার মাধ্যমে ফয়সাল নামের ওই সাব-ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
তাফালবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের ড্রেন নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। তবে কাজের দায়িত্বে থাকা কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর সরদার বলেন, সকাল থেকে দেখি ২৫-৩০ জন শ্রমিক মাটি কাটা শুরু করেছেন। তারা (শ্রমিকরা) বলেন, এখানে ড্রেন করা হবে। অথচ আমরা জানতামই না বাজারে ড্রেন নির্মাণের কোনো প্রকল্প আছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জেনেছি সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম কাজ না করেই প্রকল্পের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে চলে গেছেন। সংবাদ প্রকাশের পর সেই টাকা নাকি তিনি ফেরত দিয়েছেন।
সাউথখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু রাজ্জাক আকন বলেন, কে কাজ করছে। কার মাধ্যমে করানো হচ্ছে, তা জানি না। কেউ বলছেও না। মনে হচ্ছে যেন জিন-পরীতে কাজ করছে। একজন ইউএনও প্রকল্পের কাজ না করে সব টাকা আত্মসাৎ করে, এটা জানা ছিল না। প্রশাসনের কাছে এ ধরনের অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, সকাল থেকে তাফালবাড়ী বাজারে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদার অনিক গাজীকে দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে শুনেছি।
ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম টিপু বলেন, রবিবার সকাল থেকে আকস্মিকভাবে রাজাপুর বাজারে টোলশেডের কাজ শুরু হয়েছে। কে করাচ্ছে, তা জানি না। সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম টাকা ফেরত পাঠিয়েছেন, তা দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে বিষয়টি সবাই গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। তার এমন জালিয়াতির শাস্তি হওয়া দরকার।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম বলেন, শুনেছি কাজ শুরু হয়েছে। কে করছে, তা জানা নেই। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে সাঁথিয়ার ইউএনও জাহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। শরণখোলার ইউএনও সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি আমিও জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করলে ইউএনও জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।