উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ১৮:২১ পিএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৬ পিএম
উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রীনিবাস হস্তান্তরের আগেই ধসে পড়েছে পলেস্তরা। প্রবা ফটো
কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দেড় বছরের কাজ সাড়ে চার বছরেও শেষ হয়নি। এদিকে নির্মাণাধীন ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা। এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৯ সালে উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ২৮৭ টাকা ব্যয়ে ১৫২টি আসনবিশিষ্ট পাঁচতলা ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজটির দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন বরিশাল। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাব-ঠিকাদারি নিয়ে কাজ করছেন স্থানীয় হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। এই কাজের কার্যাদেশে দেড় বছরের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
সরেজমিনে বুধবার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রীনিবাস ভবনটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু হস্তান্তরের পূর্বেই পাঁচতলা ভবনের দক্ষিণ দিকের চতুর্থ ও পঞ্চম তলার বাইরের দিকের একটি অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম তলার পূর্ব দিকে পেছনের অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। ভবনের দরজা-জানালা, গ্রিলসহ বিভিন্ন জায়গায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কলেজের পক্ষে কাজের তদারকি কমিটির প্রধান ও উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম করে আসছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় আমাদের অনুপস্থিতিতে তারা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ভবনের ছাদ ঢালাইসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজগুলো করে থাকেন। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। এ কারণে ভবন হস্তান্তরের পূর্বেই ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়ালের কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। দরজা-জানালাগুলো এখনই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে।
মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন বরিশালের পক্ষে সাব-ঠিকাদার হাবিবুর রহমান ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, যে অংশটি খসে পড়েছে তা মূলত ফিক্সিং ব্রিকস (সৌন্দর্য বন্ধনের জন্য ব্যবহৃত টালি)। কী কারণে এটি খসে পড়েছে তা বুঝে আসছে না, সম্ভবত অতিবৃষ্টির কারণে এটি খুলে পড়েছে। আমরা সেটি ঠিক করে দেব। ভবনের ফাটলের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটা হয়ে থাকলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে। দেড় বছরের কাজ সাড়ে চার বছরেও শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ জমির পজেশন বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব করার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। ভবনজুড়ে নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। এ ছাড়া বাউন্ডারি ওয়ালের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নতুন করে টেন্ডার হওয়ার কথা শুনেছি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী বিজন চন্দ্র রায় জানান, উলিপুর সরকারি কলেজের ছাত্রীনিবাস ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। ভবনের ত্রুটিপূর্ণ বিষয়গুলো ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। পূর্বেই ফিক্সিং ব্রিকসের কাজ করার জায়গাগুলোয় ফাটল দেখা দেয়। এরপর বৃষ্টির কারণে তা খসে পড়ে। ভবনের ফাটলসহ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি কোনো সমস্যা থাকে তা সমাধান করার পরেই ভবন হস্তান্তর করা হবে।
উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুর রহমান খোকন নির্মাণকাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রীনিবাসের ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।