রফিকুল ইসলাম, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪৯ পিএম
পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজারসংলগ্ন যমুনা নদীর পাড়ে পুরোনো নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত কারিগররা। প্রবা ফটো
পাবনার বেড়ার পদ্মা-যমুনা ও হুরাসাগরে কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণে ব্যাপক পরিমাণে পানি বাড়ছে। যমুনা নদীর তিনটি পয়েন্টে চলছে ভাঙন। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে ধান, বাদামক্ষেতসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। নতুন করে তৈরি ও পুরোনো নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় মিস্ত্রিরা। নদীতে পানি থইথই করায় নৌকা ব্যবসায়ী ও মিস্ত্রিদের কদর বেড়েছে।
ছয়টি নদী ও অর্ধশতাধিক বিলবেষ্টিত পাবনার বেড়া উপজেলার রয়েছে অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল। তার মধ্যে প্রায় বাইশটি চরে রয়েছে মানুষের বাস। কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস এসব চরে শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের রাস্তা থাকলেও বর্ষায় নৌকা ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে এই সময়ে জীবন ও জীবিকার জন্য নৌকা যেন এখানকার মানুষের নিত্যদিনকার অংশ।
প্রতিটি গ্রাম প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি আলাদা আলাদা দ্বীপ। তাই বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে একটি করে নৌকা। এসব নৌকাই তাদের চলাচলের প্রধান ভরসা। বর্ষার কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ থাকলেও জীবন-জীবিকার জন্য অসুখ-বিসুখে জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে পৌঁছানো সব কাজেই প্রয়োজন হয় নৌকার। তাছাড়া মাছ ধরা তো আছেই। তাই এ মৌসুমে নৌকা কেনা ও পুরোনোগুলো মেরামতের ধুম পড়ে যায় বেড়া উপজেলায়। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নেই নৌকার ব্যবহার হয়। তার মধ্যে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, নগরবাড়ী, রূপপুর, ঢালারচর এসব ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ইতোমধ্যে চরগুলের অধিকাংশ ডুবে গেছে। উপজেলার নাকালিয়া বাজারসংলগ্ন যমুনা নদীর পাড়ে পুরোনো নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা। জানা যায়, এ উপজেলায় ২৫-৩০টি কারখানায় নৌকা তৈরি হয়। যেসব নৌকা ব্যবহারের অনুপযোগী, সেগুলোর কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন চৌকি। নৌকার কাঠের তৈরি চৌকি টেকসই হওয়ায় এর চাহিদা ও দাম বেশি।
উপজেলার আমিনপুর বাজার বাসস্ট্যান্ডের আশরাফুল ইসলামের কারখানায় গিয়ে দেখা যায় নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। তার পাঁচটি কারখানায় ২০ জন মিস্ত্রি কাজ করছেন। কারিগরদের তৈরি করা নৌকাগুলো সারি সারি রাখা। আর তারা নিজে ব্যস্ত নতুন নৌকা তৈরিতে। তার কাছ থেকে জানা যায় কম দামের নৌকা তৈরিতে জলকড়ই, ডেম্বুল, কদম ইত্যাদি কাঠ ব্যবহার করা হয়। যার দাম পড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাইজ অনুসারে ৬-৭ হাজার টাকা। আর প্লেনশিটের তৈরি নৌকা ৮ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
কথা হয় ফজলাল মিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষার আগেই সব নৌকাই ঠিকঠাক করে আলকাতরা দেওয়া হয়। আর একেবারেই ভাঙাচোরা নৌকার কাঠ দিয়ে আমরা চৌকি বানিয়ে বিক্রি করি। ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার চৌকি এখানে পাওয়া যায়। এই চৌকি ৫০-৬০ বছরেও ঘুনেও খায় না, নষ্টও হয় না।
নৌকা কিনতে আসা চরনাগদাহর বাসিন্দা শেখ আলী জানান, দুই সপ্তাহ আগেই নৌকা কেনার দরকার ছিল; এখন না কিনে আর পারছি না। গরুর ঘাস কাটা, মাছ ধরা ও পারাপারের জন্য নৌকা কিনতে আসছি। নৌকা ছাড়া বর্ষায় আমরা অচল।
পেচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা মনির খান জানান, বর্ষার আগেই কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রায় চারদিকেই পানি চলে এসেছে। গত বছরের নৌকাটা বিক্রি করে দিয়েছি। আর আমাদের এ মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলে না। তাই নৌকা দেখতে এসেছি। দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। দামে মিললে আজই কিনে নিয়ে যাব।