সাদিক অ্যাগ্রোকে সহায়তা
প্রবা প্রতিবেদক ও সাভার সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:৫৩ পিএম
সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষকে প্রতারণামূলকভাবে সহায়তার অভিযোগে সাভার সরকারি কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সোমবার (১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম এই অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসা সম্পর্কিত নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাতে সাদিক অ্যাগ্রোকে নিয়মবহির্ভূত সহায়তার কিছু তথ্য মিলেছে। দুদকের ৯ সদস্যের তদন্ত দল বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নিয়ে যায় এবং ডেইরি ফার্মের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে।
কমিশনের অনুসন্ধান দলের নেতা আবুল কালাম আজাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অভিযানে ব্রাহামা জাতের ৭টি বাছুর পাওয়া গেছে। খামার কর্তৃপক্ষ সেগুলোর সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা গরুগুলো দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তাদের হেফাজতে দেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান। গরুগুলো জবাই করে রমজানে ২৮০ টাকা মূল্যে মাংস বিক্রি করার শর্তে ইমরানকে দেওয়া হয়েছিল। তবে ইমরান সুলভ মূল্যে বিক্রি না করে গরুগুলো তার খামারে রেখে দেন। এছাড়া নিষিদ্ধ ব্রাহামা গরু কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করে কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে বিক্রির অভিযোগ ওঠে।
দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০২১ সালে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ব্রাহামা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করা হয়। সেগুলো এতদিন পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। তবে গত এপ্রিলে রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরু জবাই করে বিক্রি করবে বলে সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন দায়িত্ব নেন। কিন্তু কোরবানি ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া গরুগুলো তিনি জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে এই অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই সাদিক অ্যাগ্রোর সাথে এখানকার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ব্রাহামা জাতের ১৮টি গরু জব্দ করে ঢাকা কাস্টম হাউস। এর মধ্যে তিনটি মারা যায়। বাকি ১৫টি গরু লালনপালনের দায়িত্ব পায় কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার। কিন্তু ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে ইমরান এই ব্রাহামা জাতের নিষিদ্ধ গরু উঠিয়েছিলেন।
অভিযানে অংশগ্রহণ করা দুদকের সহকারী পরিচালক শোয়েব ইবনে আলম বলেন, নিলাম ও মাংস হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেয়েছি। আরও কিছু ডকুমেন্ট আমাদের দিতে পারেনি তারা। পরবর্তীতে কাগজপত্র আমাদের কাছে পাঠাবে বলেছে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি; শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।
কোরবানির পশু নিয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর নানামুখী প্রতারণার বিষয়টি প্রতিদিনের বাংলাদেশে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ রোড বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর ফার্ম উচ্ছেদ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানের তৃতীয় দিন খামারটি একেবারে ভেঙে দেওয়া হয়। সাদিক অ্যাগ্রোর পুরো খামার গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং খালের পাড় ঘেঁষে স্থাপনা গড়ার নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। সাদিক অ্যাগ্রোসহ বেশকিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয় রামচন্দ্রপুর খালের দখল করা অংশ। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছাগল কিনে ভাইরাল হন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। এর ধারাবাহিকতায় মতিউরের পাহাড় সমান সম্পদের ফিরিস্তি প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
এদিকে গত ২৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় এক আদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার আদেশ দেয়। তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকেও। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশযাত্রায় আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয় মতিউর ও পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মতিউরের প্রথম পক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী।