টানা বৃষ্টি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:০৭ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:২৫ পিএম
ভারী বর্ষণের ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সোমবার রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী, নতুনপাড়া, রূপনগর এলাকায় মাইকিং করছে রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সদস্যরা। প্রবা ফটো
টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের রুমায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার বারোমাইল ওয়াইজংশন ও দলিয়ানপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তায় মাটি পড়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ধস ও রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ার কারণে সোমবার (১ জুলাই) বিকাল থেকেই বান্দরবান থেকে রুমায় স্বাভাবিক যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেও পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বান্দরবান-রুমা সড়কের বারোমাইল ওয়াইজংশন ও দলিয়ানপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তায় মাটি পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি জানান, বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথে বারোমাইল ওয়াইজংশন নামক জায়গায় পাহাড় ধসে রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছপালা পরিষ্কার করতে পারলেও যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে মাটি সরাতে পারেননি।
এদিকে সেনাবাহিনীর ২৬ ইসিবি কনস্ট্রাকশন ইউনিট মাটি সরানোর কাজ করছে। সোমবার বান্দরবানে সকাল থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে রবিবার রাত থেকে উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে বান্দরবান বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেন মাসুম জানান, ঝোড়ো বাতাস ও পাহাড় ধসে পাঁচটি বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে। বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুতের খুঁটি মেরামত করে দ্রুত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ স্বাভাবিক করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথে বারোমাইল ওয়াইজংশন-দলিয়ানপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে পড়েছে বলে শুনেছি। যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে। রবিবার থেকে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।‘
বান্দরবান জেলায় গত পাঁচ বছরে পাহাড়ধসে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৬৩ জন। শুধু গত বছর পাহাড়ধসে ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এখনও বান্দরবানে শতাধিক পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েক হাজার মানুষ। ২৯ জুন নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মংপু মারমা বলেন, ‘মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের রবিবার থেকে মাইকিং করে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
বান্দরবান মৃত্তিকা সংরক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে একটানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ধস হতে পারে। সেজন্য সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।‘
বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ৭২ ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বমোট ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘পৌর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে রবিবার থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। পৌর এলাকায় ১৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা আছে।’
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন বলেন, ‘পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে জেলা শহরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে সতর্কতা অবলম্বন ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা, সড়কে পানি উঠে যান চলাচল ব্যাহত
টানা ভারী বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা করে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় রাঙামাটি শহরের ২৯টিসহ জেলায় মোট ২৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে সোমবার পর্যন্ত কোনো পাহাড়ধসের খবর পাওয়া যায়নি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘পাহাড়ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে শহরজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরে ২৯টিসহ জেলায় মোট ২৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কের কেঙ্গালছড়ি এলাকায় সড়কে পানি ওঠায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা এ তথ্য জানিয়েছেন।
রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের ১২ জুন নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়ধসে মারা যায় আরও ১১ জন। ২০১৯ সালে কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে তিনজনের মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং
খাগড়াছড়িতে ভারী বর্ষণে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকে জেলা সদরের সবুজবাগ ও কুমিল্লাটিলা, শালবন, মোহাম্মদপুরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মাঠে নামে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকায় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ধসের ঝুঁকির পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
(তথ্য দিয়েছেন বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিবেদক)