শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৪:২২ পিএম
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর এলাকায় এভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করে নদীর ভাঙন ঠেকানোর। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
বালুর বদলে জিও ব্যাগে ভরা হচ্ছে নদীর বালু-মাটি। প্রকল্পের কাজও চলছে ধীরগতিতে। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর এলাকায় এভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করে নদীর ভাঙন ঠেকানোর। কিন্তু এলাকাবাসী বলছে, পদ্মার জলে ডুবে নষ্ট হয়ে যাবে এসব জিও ব্যাগ। ফলে বাঁধ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিচালিত এ কার্যক্রমে কোনো সুফল মিলবে না।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর চারঘাট-বাঘা এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পিরোজপুর এলাকার ৪০০ মিটার জায়গায় নদীর ভাঙন রোধে এ কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় ৬২ হাজার ৫০০টি জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। দরপত্রে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত শুষ্ক বালি দিয়ে জিও ব্যাগ ভরাট করে সেলাই করার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাগের ওজন হবে ২৫০ কেজি। কাজটি বাস্তবায়ন করছে আমিন অ্যান্ড কোং।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছে, শুষ্ক বালুর পরিবর্তে বালু-মাটি মিশ্রিত আবর্জনা ভরে জিও ব্যাগ ভর্তি করা হয়েছে। এরপর তা ফেলে রাখা হয়েছে নদীর তীরেই। এদিকে পদ্মায় কয়েকদিন ধরে পানি বাড়তে থাকায় এসব জিও ব্যাগ চলে যাচ্ছে নদীর অতলে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীর ভাঙন ঠেকানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
স্থানীয়রা বলছে, পদ্মা নদীর মীরগঞ্জ এলাকায় কয়েক বছর আগে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। রাওথা এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে গত বছর। কিন্তু পিরোজপুর এলাকায় বাঁধ না থাকায় কয়েক বছর ধরে এলাকায় নদীভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। বিলীন হয়েছে শত শত বিঘা জমি। এছাড়া বিলীনের অপেক্ষায় আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। তাই স্থানীয়রা পিরোজপুর এলাকায় নদীতীরে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হলেও পাউবো জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করে নদীর ভাঙন রোধ করার প্রকল্প নেয়। কিন্তু কাজে অনিয়ম ও ধীরগতির কারণে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
পিরোজপুর এলাকার মিঠু রানা বলেন, নদীভাঙনে অনেক স্থাপনা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। জমিজমা হারিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক দাবিদাওয়ার পর জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং শুরু হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত বালির পরিবর্তনে নদীর বালি-মাটি দিয়ে বস্তা ভরা হচ্ছে। অবশ্য কিছু বস্তায় কর্তৃপক্ষকে দেখানোর জন্য নদীর চরের ভালো মানের বালুও দেওয়া হয়েছে। এদিকে পানি বাড়তে থাকায় নদীতে ডুবে এসব জিও ব্যাগ নষ্ট হচ্ছে। কাজটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না হলে আরও অনেক দুর্ভোগে পড়বে এলাকাবাসী।
গত শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জিও ব্যাগ ভরে নদীতীরে রাখায় তা ডুবে গেছে। স্থানীয়রা এসব ব্যাগ থেকে বালু বের করে ফেলে দিয়ে বস্তাগুলো বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় প্রকল্প এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধির দেখা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু ভাঙনকবলিত এলাকার চেয়ারম্যান হওয়ার পরও আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এলাকাবাসী বলছে, অনিয়ম হচ্ছে। নদীর চর থেকে বালু নেওয়ায় বিজিবি কিছুদিন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। কাজে ধীরগতির কারণে প্রকল্পের টাকা জলে যেতে বসেছে।’
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ম্যানেজার ইসাহাক আলী বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন।’ কিন্তু কাজের ভিডিও দেখিয়ে অনিয়ম হচ্ছে কি না জানাতে বললে তিনি আর কথা বলেননি।
তদারকি কর্মকর্তা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাহাবুব রাসেল বলেন, ‘আমার দেখা মতে, অনিয়ম হয়নি। তারপরও ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙনের জায়গায় দেওয়া হবে।’