বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১২:২৭ পিএম
বগুড়া পৌরসভা। ছবি : সংগৃহীত
বগুড়া পৌরসভার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২৭১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বাজেট উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিগ্ধ আকতার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটনসহ কাউন্সিলর ও নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেটে গৃহ ও ভূমির (বসতবাড়ি) ওপর কর খাতে আয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। একইভাবে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর খাতের আয় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ কোটি, ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ খাতেও প্রায় একই হারে কর বাড়িয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ব্যবসা খাতের কর ২৭ ভাগ বাড়িয়ে ৬ কোটি টাকা এবং ভূমি উন্নয়ন কর খাতে নতুন করে ১০ লাখ টাকা কর ও ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স খাত (সরকারিভাবে লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে) থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে।
ঘোষিত বাজেটের ২৭১ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ বা ৭৯ কোটি টাকা পৌরসভার নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ বা ১৯১ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা হিসেবে পাওয়ার আশা করা হয়েছে। একইভাবে গত বছরও (২০২৩-২৪) ৭০ ভাগ প্রকল্প সহায়তা ধরে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫০ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত তা ৬০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
বাজেট ঘোষণার সময় উপস্থিত নাগরিকরা শহরে যানজট নিরসনে স্কুলবাসের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ, শহরের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য রাখার স্থানগুলোকে আবদ্ধ করা এবং গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের অধিক হারে বৃত্তি প্রদানের পরামর্শ দেন।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র রেজাউল করিম বাদশা ১৪৮ বছরের পুরোনো বগুড়া পৌর এলাকায় ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক এবং ১ হাজার ২১০ কিলোমিটার ড্রেনের তথ্য দিয়ে বলেন, গত বছর সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ এবং সংস্কার খাতে ১৩ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে ওই খাতে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ২৭ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং আখ্যায়িত করে মেয়র বলেন, ‘শহরে প্রতিদিন ২০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জাম নেই। ফলে যানবাহন এবং সরঞ্জামগুলো ভাড়া নিয়ে বর্জ্য অপসারণ করতে হচ্ছে। এতে পৌরসভার বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।’ বর্জ্য অপসারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন ‘সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার আশা করে মেয়র বলেন, ‘প্রকল্পটি চালু হলে বগুড়া একটি পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে উঠবে।’
মেয়র রেজাউল করিম বাদশা তার বক্তৃায় আগামীতে নতুন শিক্ষার্থী ছাউনি, পৌরসভা অফিসসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নারীদের জন্য শৌচাগার এবং প্রবীণদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের কথাও জানান।
এদিকে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। সিরাজুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, শহরে সব সময় যানজট লেগেই আছে। পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভাঙা। বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হয়। আর রাস্তার আশপাশে ময়লা ফেলার স্থান করে রেখেছে পৌরসভা। এসব ব্যবস্থার যদি উন্নয়ন না হয়ে তাহলে কোটি কোটি টাকার বাজেট দিয়ে আমরা কী করব! আমরা চাই বাজেটের মাধ্যমে বগুড়া পৌরসভার সকল এলাকার উন্নয়ন হোক।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে বাজেটে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় এমন কিছু রাখা হয়নি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ ও উন্নয়ন হোক এটা নিয়ে পৌরসভার মাথাব্যথা নেই। আর নাগরিক সুবিধাই যেখানে মেলে না সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। আমাদের ওপর প্রতিবছরই অতিরিক্ত করের বোঝা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, এই বাজেটে সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন হয় সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা করা হয়নি। কর বাড়ানো আমাদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এত এত কর বাড়িয়েও নাগরিকরা সেভাবে সেবা পাচ্ছে না। আর শহরে পৌরসভার কোনো কিছুতে নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনো বিষয়ে বলতে গেলে একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই বাজেট এমন হোক যেখানে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।