রাঙামাটি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১২:২৩ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৪:৩৯ পিএম
২০১৫ সালে এক বছরের জন্য গঠিত হলেও রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সেই কমিটি ভেঙেছে ৯ বছর পর। গত ২৯ এপ্রিল জেলা সম্মেলন হওয়ার দুইমাস পর এবার কেন্দ্র থেকে ঘোষিত হলো রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। শনিবার (২৯ জুন) রাতে ৬২ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রনি হোসেনকে সভাপতি ও রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সোহাগ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষণা করা হয়। যা নিজ নিজ ভেরিফায়েড পেইজ থেকেও শেয়ার করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইনান।
ঘোষিত ৬২ সদস্যের কমিটিতে সহসভাপতি রাখা হয়েছে ৪০ জনকে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়েছে ১০ জনকে। আর সাংগঠনিক সম্পাদক রাখা হয়েছে ১০ জনকে।
অথচ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি জেলা সংসদের পূর্ণ কমিটি হবে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। আর সেই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ২১, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৯ জন করে রাখার সুযোগ রয়েছে। আংশিক কমিটিতে পদ সংখ্যাতেই দেখা গেছে গঠনতন্ত্রের ব্যতয়।
অভিযোগ উঠেছে, নতুন ঘোষিত কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী ও নানা প্রসঙ্গে বিতর্কিতরাও। মানা হয়নি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স-সীমা। পদ বণ্টনেও ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ দেখা হয়নি।
সদ্য বিগত কমিটির সহ-সম্পাদক ও নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন ফাতেমা তুজ জোহরা রেশমী। গঠনতন্ত্রের নানা ব্যতয়ের অভিযোগ তুলে রেশমী বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের এই কমিটি জেলা আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে করা হয়নি। দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্মেলন হলো; সেই সম্মেলনের দুই মাস পর কমিটি এলো। আবার সেই কমিটিতে ছাত্রদল থেকে আসা নেতা প্রথম সহ-সভাপতি হয়েছেন। চাকরিজীবী সভাপতি হয়েছেন। অছাত্র-বিবাহিতরাও পদ পেয়েছেন। বাদ পড়েনি বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া নেতারাও। সভাপতির নিজের ছাত্রত্ব নেই। আবার কম বয়সী নেতাকর্মীকে আংশিক কমিটির নামে ৬২ জনের কমিটিতে রাখা হয়েছে। সব কিছু মিলে এটি একটি হাস্যকর ও অগঠনতান্ত্রিক কমিটি হয়েছে।’
জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সহ-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সারও ছিলেন নতুন কমিটির সভাপতি পদ প্রত্যাশী। কায়সারের অভিযোগ, ৯ বছর পর রাঙামাটি ছাত্রলীগের কমিটি হলো; কিন্তু সেখানে আমাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কমিটি হয়নি। একজন চাকরিজীবী হয়েছেন সভাপতি। অনেক জুনিয়র এবং অছাত্ররা পদে এসেছে।
তবে নতুন কমিটির সভাপতি মো. রনি হোসেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা চট্টগ্রাম সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন বলে দাবি করেছেন।
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা বলেন, ‘আমাকে রাঙামাটি ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে। রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর যে সম্প্রীতি সেটা সমুন্নত রেখে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন সেটি বাস্তবায়নে স্মার্ট ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা কাজ করে যাবো।’
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. রনি হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাবেক যারা ছিলেন; তাদের অভিনন্দন ও দোয়া প্রত্যাশা করি। তাদের রেখে যাওয়া ছাত্রলীগের ধারাবাহিকতা যেন আমরা রক্ষা করতে পারি। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশে ঢালাওভাবে বা গতানুগতিক রাজনীতি না করে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রগতিশীল রাজনীতির বার্তা রাঙামাটির প্রত্যন্ত জায়গায় পৌঁছে দেব। জননেতা দীপংকর তালুকদার ও হাজী মুছা মাতব্বরের হাতকে শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক চর্চা পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় আমরা পৌঁছে দেব।’
নতুন কমিটিকে ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ পদ বণ্টনের আপত্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এমন বিষয়গুলো দেখব।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল (সোমবার) সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলার প্রায় সব ইউনিটের নেতাকর্মীরা যথাসময়ে উপস্থিত হলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলন মঞ্চে দেরিতে আসায় উদ্বোধন হয় ৩ ঘণ্টা দেরিতে। দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদেরও ছিল উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। নতুন কমিটিতে আসন পেতে নিজেদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন ৭২ জন।
এর আগে, ২০১৫ সালের ২ জুন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। এর পরদিন ৩ জুন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি ও প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের ৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক বছরের জন্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও কমিটির ঘোষণার আড়াই বছর ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি ১৫১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ শেষের দেড় বছর পর করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।