টঙ্গী সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১০:০৮ এএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১১:০৯ এএম
সমাপনী অনুষ্ঠান চলছে এখন স্কুলে স্কুলে। ছবি : প্রবা
গাজীপুরে টঙ্গীর স্কুলে স্কুলে এখন চলছে সমাপনী অনুষ্ঠান। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ছিল অনেকটাই গৃহবন্দি। লেখাপড়া, খেলাধুলা, সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা আর প্রতিদিনের রুটিনমাফিক জীবনের গতি হয়ে পড়েছিল স্থবির। থমকে গিয়েছিল নিত্যদিনের সব কর্মকাণ্ড। সেই সংকট প্রায় কেটে যাওয়ার পর শিক্ষাঙ্গন আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে। প্রাণস্পন্দনে জেগে উঠেছে নতুন রূপে।
প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার প্রাক্কালে শ্রেণিকক্ষের পাঠ শেষের দিনগুলোয় ছাত্রছাত্রীরা মেতে ওঠে সমাপনী অনুষ্ঠান বা ক্লাস পার্টির আয়োজনে। প্রচলিত এ ধারা চলে আসছে বহুদিন ধরে। দু-এক দিন পরই শুরু হবে বিভিন্ন স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা। ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। এরই মাঝে সবাই মিলে এক টুকরো আনন্দ খুঁজে পেতে চলেছে স্কুলে স্কুলে ক্লাস পার্টির ব্যাপক আয়োজন। একটি ক্লাস থেকে ওপরের আরেকটি ক্লাসে বিজয়ীর বেশে নিজের স্থান দখলের আনন্দ সামনে রেখে শিশুদের এ আয়োজনে জড়িয়ে পড়েছেন তাদের মা-বাবা, ভাইবোনসহ শিক্ষকরাও।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা নিজ নিজ ক্লাসে আয়োজনে ব্যস্ত। দলবেঁধে ক্লাসরুম সাজানো হচ্ছে হরেকরকম বেলুনে। ঝালর কেটে সাঁটানো হচ্ছে, কেউ রঙিন কাগজের ফুল তৈরি করছে, আলপনা আঁকা আর বিচিত্র আকৃতির শেকলে ছেয়ে গেছে পুরো ক্লাসরুম। মনে হয় যেন প্রতিটি রুম সাজানো হয়েছে বিয়েবাড়ির সাজে। পুরো ক্যাম্পাসে শিশুরা ছোটাছুটি করছে হইহুল্লোড় করে। অন্যরকম এক আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
আজ আর স্কুলড্রেস নয়, সবার গায়ে পছন্দের নতুন জামা। নানারকম খাবার, চিপস, কোল্ডড্রিংস স্তূপ করে রাখা হয়েছে বেঞ্চের ওপর। ক্লাসের দরজায় ফিতা কেটে প্রধান শিক্ষক অন্যদের নিয়ে প্রবেশ করছেন, করতালি আর বেলুন ফোটানোর শব্দে হাস্যোজ্জ্বল এক অপরূপ পরিবেশের আবেশ ছড়িয়ে পড়ছে স্কুলজুড়ে। কেক কাটা, সবার মুখে কেক তুলে দেওয়া, শিক্ষকদের উপদেশমাখা বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক পর্ব সবই যেন মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। ছোট ক্লাসগুলোয় মায়েরা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন পিঠা, নুডলস, পিজা, জর্দা-সেমাই আরও কত কি!
সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতনের নবম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না ইয়াসমীন বলে, ‘প্রায় প্রতিটি স্কুলেই বার্ষিক পরীক্ষার আগে বছরের শেষ ক্লাসের পরদিন ক্লাস পার্টি হয়। আমরা সবাই চাঁদা দিয়ে এ আয়োজনের ব্যবস্থা করি। সেদিন অনেক মজা হয়, সবাই মিলে একসঙ্গে খাই, ছবি তুলি ক্লাসের সবাইকে এবং স্যারদের গিফট দিই, স্যারেরা দোয়া করেন। বেশ ভালো লাগে।’
টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘করোনার কারণে প্রায় দুই বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ফিরে এসেছে। লেখাপড়ার প্রতি তাদের মন সুদৃঢ় করতে তাদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে হবে। খেলাধুলা ও উৎসব ছেলেমেয়েদের মন প্রফুল্ল রাখে। বছরের শেষ দিকে স্কুলে যে সমাপনী উৎসব হয়, তাতে কোমলমতি শিশুরা অনেক আনন্দ পায়। এ অনুষ্ঠান শুধু একটি অনুষ্ঠানই নয়, এতে শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের দিকনির্দেশানামূলক পরামর্শও দিয়ে থাকেন।’