হবিগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৩০ এএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৪৭ পিএম
ক্ষতিগ্রস্ত রাবার ড্যাম। ছবি : প্রবা
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় সোনাই নদীর ওপর ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামটি অনেকটাই কাজে আসছে না কৃষকের। ড্যামের আশপাশ থেকে প্রভাবশালী বালুখেকোদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং বিভিন্ন সময় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নষ্ট হয়ে পড়ছে ড্যামটি।
পাঁচ বছর ধরে এমন অবস্থা হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন দেখা যায়, রাবার ড্যামের ওপর নির্মিত ব্রিজটিও ভেঙে যেতে পারে যেকোনো সময়। কারণ এর দুই পাশের গোড়ার মাটিও অনেকটা সরে গেছে। একই কারণে আগে ভেঙে গেছে রাবার ড্যামের কার্যালয় ও পাহারাদার থাকার ঘরটি।
মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী, ধর্মঘর ও বহরা ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার কৃষকের সেচের সুবিধার জন্য ২০০২ সালে সোনাই নদীর চৌমুহনী ইউনিয়নের মহব্বতপুর এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাজারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য ড্যামটি নির্মাণ করে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
শুকনো মৌসুমে কৃষক সোনাই নদীর পানি দিয়ে রাবার ড্যামটি ব্যবহার করে জমি চাষাবাদ করতেন। রাবার ড্যামের কাছ থেকে বালু উত্তোলন ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি স্রোতে ২০১৭ সালে বিধ্বস্ত হয় ড্যামটি। এর পর থেকে শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে এলাকার কৃষক চাষাবাদ করতে পারছেন না। এতে প্রায় ৮০০ হেক্টর কৃষিজমি চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। অতিদ্রুত রাবার ড্যামটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কৃষক রঞ্জিত বাবু বলেন, ‘ড্যামটি নষ্ট থাকায় আমাদের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে, কোনো কৃষিকাজ করা যাচ্ছে না।’ স্থানীয় জুয়েল মিয়া, মিনার আলী, রুবেল মিয়া, রণজিৎ রায়, ওসমান মিয়া, তারা মিয়াসহ অনেক কৃষক জানান, কৃষিকাজ করতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি শতকে অন্য সেচ মালিকদের পানির খরচ বাবদ দিতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। রাবার ড্যামের পাহারাদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, যে ঘরটায় তারা থাকেন সেই ঘরটিও ভেঙে গেছে।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে ড্যামটির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। রাবার ড্যাম প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ সদস্য রয়েছেন। তারা বর্তমানে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। পানি ব্যবস্থাপনার সুযোগ-সুবিধার জন্য তাড়াতাড়ি এটি মেরামত করা প্রয়োজন। আমরা চাই সোনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন একেবারে বন্ধ হোক।’
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল মোবারক বলেন, ‘সোনাই নদীর রাবার ড্যামটি ২০০২ সালে নির্মিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে ড্যামটি বিধ্বস্ত হয়। এর একমাত্র কারণ এলাকার প্রভাবশালী বালুখেকোদের বালু উত্তোলনের ফলে এর পেছনের দিক দুর্বল হয়ে যাওয়া। আমাদের যে অফিসঘরটি ছিল সেটিও ভেঙে গেছে।’
কৃষকের কল্যাণে রাবার ড্যামটি দ্রুত মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।
হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল বাছির বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাজারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সোনাই নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যাম মেরামতে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে অর্থ অনুমোদনের জন্য প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই একটি বিশেষজ্ঞ টিমের ড্যামটি পরিদর্শনের কথা রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে এটি মেরামত করা হবে।’
মাধবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম বলেন, ‘রাবার ড্যামটি অকেজো হওয়ার কারণে এলাকার কৃষকের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।’