মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪ ১৫:৫৩ পিএম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪ ১৫:৫৯ পিএম
কিশোরগঞ্জের ইচ্ছাগঞ্জ-শোলাকিয়া বাজারে আসা কোরবানির গরু। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাট ও বাজারে কোরবানির গরুর দাম এবার বেশ চড়া। দাম বেশি হওয়ায় গরুর মালিক ও পালনকারীদের খোশ মেজাজে দেখা গেলেও কোরবানির পশু কিনতে আসা লোকজন পড়েছেন বিপাকে। কারণ গরুর দামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না তারা। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিশেষ করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর হাট ইচ্ছাগঞ্জ-শোলাকিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির জন্য বিক্রেতারা হাজার হাজার গরু বাজারে তুলেছেন। বাজার ভরে আশপাশের সড়ক দখল করে নিয়েছে গরুর পাল। কিন্তু বাজারে গরুর দাম বেশি। শহরের বাসিন্দা ক্রেতা আবদুল লতিফ ও সহকারী অধ্যাপক সাদেকুর রহমান জানান, গত বছর এক লাখ ২০ হাজার টাকায় যে গরু বিক্রি হয়েছে সেরকম গরুর দাম ১ লাখ ৬০ হাজারে গিয়ে উঠেছে। ফলে সাধারণ মানুষ কোরবানি দিতে আর্থিক সমস্যায় পড়েছে। বিশেষ করে ভাগে গরু কোরবানি দেওয়া লোকজন হিসাব মিলাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ভাগদাতারা অন্য খরচ কমিয়ে ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা যুক্ত করে মাঝারি আকারের গরু কিনছে।
অন্যদিকে যারা গরু লালন-পালন করে বড় করেছেন তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। কারণ এ বছর তারা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন বলে পালনকারীরা জানান। আর পত্তনকারীরাও বিক্রির পর যা পাবেন তা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় বেশ ভালো টাকা। বাজারে গরুর ভালো দাম থাকায় সারা জেলায় কয়েক হাজার গরু পালনকারীরা ঈদ উৎসব নিয়ে বেশ আনন্দে রয়েছেন। সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকৃতির গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি বাজারে বাজারে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারদের সমাগম বেড়েছে।
এ বছর মালিকপক্ষ গরুর খোরাকি বাদ দিয়ে বাজারে গরুর সর্বোচ্চ দামের অর্ধেক পালনকারীদের দেবেন। এতে করে তাদের পরিশ্রম বাদ দিলে অধিকাংশ পালনকারী বিক্রয়কৃত গরুর দাম থেকে বেশ লাভবান হবেন। বাজারে দেখা গেছে, ৭০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা দামের গরু এবার বাজারে আনা হয়েছে।
যশোদল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন ও মহিনন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, কিশোরগঞ্জে জেলার সর্বত্র অতিদরিদ্র লোকজন গরু পালন করার জন্য গরু পত্তন নিয়ে থাকে। সাধারণত ঈদুল আজহার ছয় মাস কিংবা এক বছর আগে সচ্ছল ব্যক্তিরা কোরবানি কিংবা ব্যবসা করার জন্য গরু কিনে গরিব লোকজনের কাছে পালনের জন্য দিয়ে দেয়। শর্ত থাকে গরুর খাবারের অর্ধেক মালিকপক্ষ, অর্ধেক পালনকারী বহন করবে। ঈদের বাজারে বিক্রয় মূল্যের মুনাফার অর্থ মালিক ও পালনকারী অর্ধেক করে ভাগাভাগি করে নেবেন। তাই এবার কোরবানির বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় পালনকারীদের চোখে-মুখে আনন্দ-হাসি।
সদর উপজেলার পাটধা গ্রামের চন্দু মিয়া জানান, তিন মাস আগে ১৬ হাজার ২০০ টাকায় মালিকপক্ষ গরুটি কিনে তাকে পালনের দায়িত্ব দেন। গরুর খাবার খরচসহ তার দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন বাজারে এটি তিনি ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তাই সামান্য পরিশ্রমে প্রায় ৬০% শতাংশ লাভ গুনতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। কষ্ট করে তার ভাগ্যে লাভের টাকা আসায় তিনি আগামী বছরের জন্য নিজেই দুটি গরু আশ্বিন মাসে কিনে আগামী ঈদের জন্য পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যবসায়ী মো. আতহার উদ্দিন জানান, তিনি ছয় মাস আগে ৬০ হাজার টাকায় দুটি ষাঁড় গরু কিনে তার ফিশারিতে একজনকে পালন করতে দিয়েছিলেন। বাজারে দুটি গরুর সর্বোচ্চ দাম হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত বছর গরু বেচতে লোকসান হলেও এবার ভালো লাভ হচ্ছে। বিশেষ করে গরু দুটি লালন-পালন যিনি করেছেন তার লাভ হওয়ায় তার ভালো লাগছে বলে জানান। চাকরিজীবী আলী আকবর জানান, তিনিসহ তার আরও চার অংশীদার বাজারে গরু কিনতে এসে বিপাকে পড়েছেন। কারণ এবার বাজার বেশ চড়া। তাদের বাজেট ছিল ৭০ হাজার টাকা। অথচ গরু কিনতে হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায়। অথচ গত বছর এমন গরুর দাম ছিল এক লাখ ৫ হাজার টাকা।
মেরেঙ্গা বাজারের একাধিক গরুর ব্যবসায়ী জানান, সীমান্তের ওপর থেকে পশু আমদানি এবার কম। তাই ঢাকার পাইকাররা এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। ফলে বাজার চাঙ্গা হয়ে দেশি গরুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গেছে।
একাধিক বাজার ঘুরে জানা গেছে, দাম বেশি হলেও চাঁদাবাজদের কোনো দৌরাত্ম্য নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেছেন।