ঝিনাইদহ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ২২:২০ পিএম
রবিবার শৈলকুপা থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানা ঘেরাও করে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আধাঘন্টা ধরে চলা হামলা-পাল্টা হামলায় পুলিশ সহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (৯ জুন) বিকাল ৩টার দিকে থানা চত্বর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীদের ইটের আঘাত ও পুলিশের টিয়ারসেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে হামলাকারী ফিরোজ শিকদার, আলী আকবর, হাজি শিকদার, রাজিব, আজগর, তুহিন, নাফিস, সালামত, মুইম, জান্নাত হোসেন, আসাদুজ্জামান, সাইফুদ্দিন, সাত্তার শিকদার, ইমন শিকদার, আব্দুস সাত্তার, ফারুক ও জলিল এবং পুলিশ সদস্য ফিরোজ, হাসান, সোহান, ইমরানসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালের দিকে উপজেলার ধাওড়া গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের মৃত আব্দুস সাত্তার শিকদারের ছেলে মুস্তাক শিকদারকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। সে গত মাসের ২২ তারিখে লাঙ্গলবাধের বন্দেখালি গ্রামের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার প্রধান আসামি। মোস্তাককে গ্রেপ্তারের পর শত শত লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা থানা ঘেরাও করে। তারা থানায় ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে।
থানা চত্ত্বরের ভেতরে এমন ঘটনায় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুরো থানা চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় আধাঘন্টা ধরে চলে হামলা পালটা হামলা। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকজন। আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ হামলাকারীরা মেয়র কাজী আশরাফুল আজম ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নুর সমর্থক।
হামলার ঘটনায় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু বলেন, তিনি ঘটনার কোন কিছুই জানেন না। হামলার সময় তিনি ঝিনাইদহে অবস্থান করছিলেন বলে জানান।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মুস্তাক থানার এজাহারভূক্ত আসামি। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা থানায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান জাকারিয়া বলেন, হামলার ঘটনায় অন্তত ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। থানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । এছাড়া দুর্বৃত্ত ও উশৃঙ্খল ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলবে। পুলিশের ওপর হামলা ও থানা ঘেরাওয়ের ঘটনায় মামলা হবে।
শুক্রবার (৭ জুন) ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজমের একটি বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন ও জনমনে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এদিন সন্ধ্যার দিকে ঝিনাইদহ-১ আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম শৈলকুপা থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে গলায় গামছা বেঁধে বিতাড়িত করার হুমকি দেন।
এ সময় হাজারো জনতার সামনে মেয়র আরও বলেন, এ দুর্নীতিবাজ ওসি সন্ত্রাস করছে। আমরা চাই দুর্নীতিবাজ প্রশাসন বিশেষ করে এ ওসি এখান থেকে চলে যাক। তা না হলে গলায় গামছা বেঁধে তাকে আমরা বিতাড়িত করব। পৌর মেয়রের এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়।