পেকুয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ২২:০৭ পিএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ২৩:৩৪ পিএম
কক্সবাজারের পেকুয়ায় এক স্কুলশিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও জ্ঞান ফেরেনি তার। এদিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের একটি স্কুল থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। গত এক বছর ধরে মগনামা ইউনিয়নের বাজারপাড়া এলাকার ছাদেক হোসেনের ছেলে তাওসীফের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রামের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণ করে তাওসীফ।
ভুক্তভোগীর মা বলেন, আমার মেয়ে গত বুধবার সকালে টেইলার্সে কাপড় সেলাইয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পরের দিন সকালে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে এক ব্যক্তি আমাকে মোবাইল করে মগনামা কাটাফাঁড়ি ব্রিজ এলাকায় আসতে বলে। সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন তিনি। এসময় তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পরিচয় দেননি। তার কথামতো কাটাফাঁড়ি ব্রিজ এলাকায় এসে ওই নাম্বারে একাধিকবার মোবাইল কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করি। তবে বিকালে এক প্রতিবেশী মেয়েকে পাওয়া গেছে বলে ফোন করে আমাকে পেকুয়া বাজারে যেতে বলে। সন্ধ্যা নাগাদ আমার মেয়েকে পেকুয়া বাজারের পূর্ব পাশে ডিসি রোডের মাথা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে তার মা আরও বলেন, মগনামা বাজার পাড়ার ছাদেক হোসেনের ছেলে তাওসীফের সঙ্গে আমার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক বছর আগে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে চট্টগ্রামের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে সে। গত বৃহস্পতিবার ছাদেক হোসেন চট্টগ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে এসে পেকুয়ায় সড়কে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি, প্রতিবেশী আমির হোসেন তাওসীফের বন্ধু। পুরো ঘটনায় সেও জড়িত। আমার মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতালে ভর্তি করেছি। একটু পরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে। দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এদিকে শিক্ষার্থীর মা আরও জানান, এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে। মীমাংসা করতে দুই পক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। সেখানে দেনদরবার না হওয়ায় মীমাংসা হয়নি। তবে তারা এখনও হাল ছাড়েনি।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, ভুক্তভোগী রোগীকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এখনও তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হবে।
এদিকে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত তিন দিনে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন অভিযুক্তের স্বজন পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান, উজানটিয়া ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল হোসেন, মগনামা ইউপি সদস্য শাহ আলম, নজরুল ইসলাম, উজানটিয়ার সোনালি বাজার এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন লুতফাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
এ বিষয়ে মগনামা ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার একটি ছেলে উজানটিয়া এলাকার একটা মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করার অভিযোগের কথা শুনেছি। পরে ছেলে পক্ষের অনুরোধে আমরা দুইপক্ষের মানুষজন নিয়ে কয়েকবার বৈঠকে বসেছি। ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা তা সমঝোতার চেষ্টা করছি।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, এখনও পর্যন্ত কারও কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।