জয়পুরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৯:১৭ পিএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১৯:৩৬ পিএম
জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাটে কোরবানির পশুর হাট। প্রবা ফটো
জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাটে কোরবানির পশুর হাট বেশ জমে উঠেছে। শনিবার (৮ জুন) হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় বোল্ডার জাতের অনেক গরু উঠেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে ভালো। তবে হাট ইজারাদার ও তার নিয়োজিত লোকজন নিয়ম বর্হিভূতভাবে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এদিকে কোরবানি পশুরহাটে ভারতীয় গরু আমদানি ও নিয়ম বর্হিভূত হাসিল আদায়ের কারণ জানতে চাওয়ায় হাট ইজারাদার ও জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক চম্পক কুমারের সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ করে তার মুঠোফোন কেড়ে নেন। শনিবার (৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় হাট ইজারাদারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গরমে কোরবানির পশুরহাটে প্রচুর দেশি গরুর আমদানি হয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় বোল্ডার জাতের অনেক গরুও রয়েছে। গরু কেনা-বেচা ভালো হচ্ছে। তবে দেশি বড় গরুর দাম তুলনামূলক কম। ক্রেতারা ভারতীয় বোল্ডার গরু বেশি পছন্দ করছেন এবং কিনছেন।
কোরবানির পশুর হাটে দেশি গরু। প্রবা ফটো
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, হাট ইজারাদার ও তার নিয়োজিত লোকজনেরা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে হাসিল আদায় করছেন। ক্রেতার কাছে ৬৫০ টাকা ও বিক্রেতার কাছে ১০০ টাকা করে হাসিল আদায় করা হচ্ছে। হাটের হাসিল আদায়ের রসিদে হাসিলের টাকার অংক উল্লেখ করা হচ্ছে না।
এদিকে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক সরকার মোহাম্মদ রায়হানের গত ৪ এপ্রিল স্বাক্ষরিত জয়পুরহাট জেলার উপজেলা পৌরসভার হাট-বাজারের ১৪৩১ অনুমোদিত টোল রেট বলা আছে, প্রতিটি গরু-মহিষ, ঘোড়া ও উটের হাসিল মূল্য ৫৫০ টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতা যেকোন একপক্ষের কাছে হাসিল আদায় করতে হবে। কিন্তু নিয়ম বর্হিভূতভাবে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছেন হাট ইজারাদার ও জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা।
পশুরহাটের ইজারায় অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হয়। প্রবা ফটো
হাটে আসা জহুরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, যারা ইজারার হাসিল লিখছে তারা বিক্রেতার কাছ থেকে একশ টাকা নিচ্ছে। আর ক্রেতার কাছ থেকে ৬৫০ টাকা নিচ্ছে। রসিদে হাসিলের টাকা উল্লেখ করা হয়নি।
পাঁচবিবির সালপাড়া বাজার এলাকা থেকে আসা আরেক বিক্রেতা মো. মজনু বলেন, আমদানি বেশি, ব্যাপারী আসছে না। শুধু সাদা বোল্ডার কিনছে।
গাজীপুর থেকে আসা ব্যাপারী মো. রাজু বলেন, ১০টি ইন্ডিয়ান বোল্ডার জাতের গরু কেনা হবে। দেশি ষাঁড় কেনার টার্গেট নেই। এর মধ্যে ৮টি গরু কেনা হয়েছে। দাম পড়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা। আর দুটি বোল্ডার গরু কিনে চলে যাব।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থেকে দুটি ইন্ডিয়ান বোল্ডার জাতের গরু বিক্রি জন্য নিয়ে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে দুটি গরু সাড়ে ৩শ (৩ লক্ষ ৫০ হাজার) দিয়ে কিনেছিলাম। আজকে দাম চাচ্ছি সাড়ে ৪শ। কিন্তু ৪শ ভাঙ্গে দাম বলে। এই দামে বিক্রি করলে লাভ হবে না।
কোরবানির পশুর হাটে ভারতীয় গরু। প্রবা ফটো
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর থেকে আসা গরু বিক্রেতা হিরো সরদার বলেন, ৪টি বড় ষাঁড় এনেছিলাম। দুটি বিক্রি করেছি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে। বাড়িতে এগুলো ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বলেছিল। এখানে এনে আরও কম টাকা পেলাম। আর দুটি গরু বিক্রি হয়নি। এই দুটির চাওয়া দাম ৪ লাখের উপর। বাড়িতে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলেছিল। কিন্তু হাটে এসে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বলেছে।
হাটে ভারতীয় বোল্ডার গরু প্রসঙ্গে জানতে হাট ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা বলেন, আমাদের এই এলাকায় ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ছোট বাছুরগুলোকে বোল্ডারে রূপান্তর করে বিক্রি করা হয়। এখানে একেকজন খামারি চার-পাঁচ বছর থেকে গরুগুলো লালন-পালন করে বিক্রি করছে। জয়পুরহাটের কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু ঢোকার কোন ব্যবস্থা নেই।
অতিরিক্ত হাসিল আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্ষেপে যান হাটের ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা। প্রবা ফটো
হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন হাট ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা। মুঠোফোনে ভিডিও বক্তব্য নেওয়ার সময় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ করে মুঠোফোন কেড়ে নেন তিনি। পরে সেখান থেকে মুঠোফোন নিয়ে চলে আসেন এই সাংবাদিক। সেসময় কালীচরণ আগরওয়ালা বলেন, ‘আমাদের খরচ নাই? প্রশাসন টাকা নেয় না?’
নতুনহাট জয়পুরহাট পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন। এ বিষয়ে জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। কোরবানি পশুর হাট-বাজারের টোল আদায় নিয়ে সোমবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় এক সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে মেয়র, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, হাটের ইজারাদাররা থাকবেন।