হাওরাঞ্চল (নেত্রকোণা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৮:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১৯:১৬ পিএম
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে চন্দুল ওরফে শান্তু মিয়া নামে এক ব্যক্তির বাম কান কামড়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন তার স্ত্রী। ঘটনার পর পরই শান্তু মিয়াকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকরা তার বিচ্ছিন্ন হওয়া কানটি প্রতিস্থাপন করতে পারেননি। এমতাবস্থায় শান্তু মিয়া পুনরায় মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রবিবার (৯ জুন) দুপুরে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীনে থাকা আহত শান্তু মিয়া ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনগঞ্জ পৌরশহরের হাসপাতাল রোডের উত্তর দৌলতপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত চন্দুল মিয়া ওরফে শান্তু মিয়া ওই এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। তার স্ত্রীর নাম রাহেলা বেগম।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শান্তু মিয়া ও তার স্ত্রী রাহেলা বেগমের ৩০ বছরের সংসার জীবনে কারণে অকারণে প্রায় সময়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লাগে। একপর্যায়ে স্ত্রী রাহেলা ক্ষিপ্ত হয়ে শান্তু মিয়ার কানে জোরে কামড় দেয়। এতে কান প্রায় পুরোটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয়রা দ্রুত শান্তু মিয়াকে উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। এসময় বিচ্ছিন্ন কানের অংশটুকুও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও তার কানের বিচ্ছিন্ন অংশটুকু প্রতিস্থাপন করতে পারেননি। সেখানে চিকিৎসা শেষে পরদিন শুক্রবার তাকে ফের মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে শান্তু মিয়া বলেন, আমার কান পুরোটা কামড়ে ছিড়ে ফেলেছে। ময়মনসিংহ গিয়েও আর লাগানো যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ৩০ বছরের সংসার জীবন চলছে। সব সময়ই সে আমার সঙ্গে ঝগড়া করে।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার বড় ছেলে আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছে। কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি তাই তার ভালমন্দ জানার অধিকার আমার আছে। এসব জিজ্ঞাসা করতে গেলে আমার স্ত্রী আর ছেলে মিলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছে। এখনও আমি তাদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অভিযোগ করিনি। তবে একটু সুস্থ হওয়ার পর যা করা দরকার সব করব।’
শান্তু মিয়ার ছেলে মো. সাদেক মিয়া জানায়, আমার বাবা-মা প্রায় সময়ই ঝগড়া করে। তাদের ঝগড়া দেখতে আর ভালো লাগে না। সেজন্য আমি নানা বাড়ি থাকি। বিষয়টা যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর, তাই পারিবারিকভাবেই তা সমাধান হয়ে যাবে।
অভিযুক্ত রাহেলা বেগম মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পার্থ সরকার জানান, শান্তু মিয়ার কানের প্রায় সবটুকুই কামড়ে আলাদা করে ফেলেছে। শুধু নিচের কিছু অংশ রয়েছে। এটা একটা অঙ্গহানির ঘটনা। ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু সেখানেও কানের কাটা অংশটুকু প্রতিস্থাপন করা যায়নি। এখন আর কিছু করার নেই। তার সুস্থ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।’
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা লোক মুখে শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’