ফেরত আসা ৪৫ স্বজনদের অনুরোধ
কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৫:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১৫:৪৯ পিএম
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার এলাকার গফুর উদ্দিন। রবিবার (৯ জুন) ভোরে কক্সবাজার পৌঁছেই সরাসরি চলে আসেন কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাটে। টানা ৮ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ছেলে আবদুল হালিম স্বদেশে ফিরছেন। ছেলের জন্য একজন বাবার অধীর আগ্রহের অপেক্ষা।
ছেলে তখন ঘাটে পৌঁছেনি। কথা হয় বৃদ্ধ গফুর উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ছেলে আবদুল হালিম পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিল। কাজ করে কোনোরকমে চলছিল সংসার। কিন্তু হঠাৎ গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় নিখোঁজ হয় হালিম। কোনোভাবেই তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত রোজার ঈদের পরের দিন মিয়ানমার থেকে একটা ফোন আসে। ফোনে আমার ছেলে জানায় সে মিয়ানমার কারাগারে আটক আছে। তখনই তার বিষয়ে জানতে পারি।
দালাল চক্রের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে সাগর পথে ট্রলার নিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রা দিয়েছিল হালিম। যেখানে আড়াই হাজার এলাকার আরও পাঁচজন ছিল। কিন্তু দালালরা তাদের নিয়ে নামিয়ে দিয়েছিল মিয়ানমারে। ওখানে মিয়ানমারের বাহিনীর সদস্যরা আটক করে পাঠিয়েছিল কারাগারে।
গফুর উদ্দিন বলেন, সরকারের যাচাই-বাছাই শেষে কয়েকদিন আগেই জানানো হয় ছেলে আজ ফিরছে। তাই ছেলেকে নিতে কক্সবাজার আসা। ৮ মাস পর আজ খুব খুশি লাগছে। সরকারকে অভিনন্দন জানাই। আমার সঙ্গে আমার এলাকার আরও পাঁচজন এসেছেন। তাদের ছেলেও এখানে রয়েছে। ছেলেকে পেলে আমরা কোরবানের ঈদ খুব আনন্দের সঙ্গে করতে পারব।
একই কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, তার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছও ১১ মাস আগে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে মিয়ানমারের আটক হয়েছিল। ছেলে ফিরছেন তাই খুশি তিনিও।
ফেরত ৪৫ জনই সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নে যাত্রা দিয়েছিলেন। যারা ৮ থেকে ১৫ মাস কারাভোগ শেষে রবিবার ফিরেছেন স্বদেশে। ফেরত আসার পর এসব মানুষের ১০-১২ জনই এক বাক্যে অনুরোধ করেছেন দালালের প্রলোভনে যেন আর কেউ এমন ভুল পথে যাত্রা না দেয়। এটা প্রতারণা ছাড়াই আর কিছু না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে এই ৪৫ জন বাংলাদেশি রবিবার সকাল ৯টার পর পরই কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাট এসে পৌঁছে।
বঙ্গোপসাগরের শূণ্যরেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে এসব বাংলাদেশিকে নিয়ে বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর একটি গাম বোট বা ছোট্ট জাহাজ যোগে আনা হয় তাদের। ওই সময় আসেন মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এরা মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে নিয়ে ফেরত গেছেন।