কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৫:০৩ পিএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১৫:৩১ পিএম
রবিবার সকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনাসংলগ্ন নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিটিএ এর জেটিঘাট দিয়ে হস্তান্তর প্রক্রিয়া করা হয়। প্রবা ফটো
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ বিজিপি ও সেনাসদস্যকে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। অপরদিকে মিয়ানমারে বিভিন্ন সময়ে কারাভোগ করা ৪৫ জন বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে দেশটি। বঙ্গোপসাগরের শূন্যরেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে এসব বাংলাদেশি নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি গাম বোট বা ছোট্ট জাহাজে করে হস্তান্তর করা হয়।
রবিবার (৯ জুন) সকাল ৯টার পরপরই কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনাসংলগ্ন নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিটিএ-এর জেটিঘাট এসে পৌঁছে। একই সময় অপর একটি গাম বোটে করে ঘাটে আসে মিয়ানমারের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
এর আগে রবিবার সকাল ৭টার দিকে জেটিঘাটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা হয় মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনাসদস্যকে।
টানা ৩ ঘণ্টার বেশি সময় নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনাসদস্যকে গ্রহণ করে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর দুটি গাম বোটে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিআইডব্লিটিএ ঘাট থেকে যাত্রা দেয়। এদের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সূত্র জানিয়েছে, রবিবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাসদস্যদের ৪টি বাসে করে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ-এর জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের কার্যাদি শুরু করা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
এর মধ্যে একই স্থানে মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষে দেশে ফেরত আসতে ৪৫ বাংলাদেশি নাগরিককে আনা হয়। ওখানে চলে উভয় পক্ষের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। পুরো কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েসহ প্রতিনিধিদলকে বিদায় জানান উপস্থিত কর্মকর্তারা। তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল বা বিজিবির কোনো কর্মকর্তাই গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের বাহিনীর হাতে আটক শেষে কারাভোগ শেষ করা ৪৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ওখানে কক্সবাজার, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা রয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনাসদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগে দুই দফায় ২৫ এপ্রিল ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬১৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে গত ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে ফেরত আনা হয়েছে আরও ১৭৩ বাংলাদেশিকে।’
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরছিলেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি। একই সঙ্গে ওইদিন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনাসদস্যকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।
এদিকে কারাভোগ শেষে দেশে ফেরা ৪৫ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৪৫ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলছে। এখানে কোনো অপরাধী বা মামলার আসামি রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। আসামি থাকলে তাদের আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হবে। না হয় স্বজনদের হস্তান্তর করা হবে। এটি সম্পন্ন করতে কিছু সময় লাগবে।