তৈয়বুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১২:১৯ পিএম
কুমিল্লার বরুড়ায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে দেড় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছে ১০ গ্রামের মানুষ। শনিবার তোলা। প্রবা ফটো
দেওড়া, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার একটি গ্রাম। গ্রামটির বিস্তীর্ণ একটি ফসলের মাঠ পেরোলেই খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের জয়নগর গ্রাম। জয়নগর গ্রামসহ ওই ইউনিয়ন পরিষদের ১০ গ্রামের মানুষকে বরুড়া সদরে পৌঁছাতে বেগ পেতে হতো। সরাসরি রাস্তা ছিল না। বিভিন্ন পথে ঘুরে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করে তারা সদরে পৌঁছাত। দেওড়া গ্রামের অনেক শিশু-কিশোর জয়নগর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। শুকনো মৌসুমে আলপথ ধরে তারা স্কুলে যেত। বর্ষায় তাদের পড়তে হতো বিড়ম্বনায়।
তাদের বিড়ম্বনার দিন শেষ হচ্ছে। দেওড়া থেকে জয়নগরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝ বরাবর স্বেচ্ছাশ্রমে দেড় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছে ১০ গ্রামের মানুষ। এ রাস্তার কাজ শেষ হলে বরুড়া সদর থেকে এসব গ্রামের দূরত্ব কমে আসবে। আগে যে পথ পাড়ি দিতে এক ঘণ্টা লাগত, রাস্তার কাজ শেষ হলে ১৫ মিনিটেই সে পথ পাড়ি দিতে পারবে গ্রামের মানুষ। সড়কটি দেওড়া গুলগুইল্লা মার্কেট থেকে উপজেলার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে গিয়ে মিলেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠের দাবদাহের মধ্যে বেশ কয়েকজন মানুষ সড়ক তৈরি করছে। মাথা থেকে ঘাম বেয়ে পড়ছে। তবু যেন কারও ক্লান্তি নেই। কেউ কোদাল দিয়ে মাটি কাটছে। কেউ মাটির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলছে। তাদের অধিকাংশই স্বেচ্ছাসেবী। যারা নিজেরা মাটি কাটতে পারছে না তারা আর্থিক সহযোগিতা করছে। দেড় কিলোমিটার সড়কের সোয়া এক কিলোমিটার তৈরি হয়ে গেছে।
জয়নগর গ্রামের অহিদা খাতুন বলেন, আমাদের পুরাতন বাড়ি ছিল দেওড়া। দেওড়ায় পানি-কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। কয়েকবার হাত-পা ভেঙেছি। সড়কটি হয়ে গেলে আমাদের আর দুর্ভোগে পড়তে হবে না।
জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেব আলী বলেন, দেওড়া থেকে জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। এতে অনেক পথ ঘুরে আসতে হতো। সড়কটির কাজ শেষ হলে তারা কম সময়ে স্কুলে যেতে পারবে। কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও ইদ্রিস মিয়া অন্যদের সঙ্গে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। তারাও সড়কের জন্য জমি দিয়েছেন।
অন্যতম উদ্যোক্তা দেওড়া গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন। তার সঙ্গে রয়েছেন দিদারুল আলম, আবু তাহের, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে। মোশারফ হোসেন বলেন, এই মাঠে সড়ক না থাকায় শতবছর ধরে এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়ছে। রাস্তা তৈরিতে অনেকে জমি দান করেছেন। আমরা এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি শেষ হবে বলে আশা করছি।
বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বলেন, রাস্তার কাজটি দেখতে গিয়েছি। এ কাজের জন্য সহায়তা করব। এ ছাড়া পৌরসভার বরাদ্দ এলে সড়কে ইটের সলিংয়ের ব্যবস্থা করব।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বলেন, এ বিষয়ে এমপি মহোদয় ও মেয়র সাহেবের সঙ্গে কথা বলব। দেখি তাদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়।