অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১১:২৮ এএম
নতুনবাজার আনন্দ মেলা পশুর হাট ফাঁকা। প্রবা ফটো
ঈদুল আজহা ঘিরে কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার সংলগ্ন আনন্দ মেলা মাঠে বসে পশুর হাট। যেখানে পাহাড়ি অঞ্চলের দূরদূরান্তের ব্যাপারিরা কাপ্তাই হ্রদে নৌপথে গরু নিয়ে আসেন। প্রতি বছর এই হাটে বিক্রয় হতো কোটি টাকার গরু। পাহাড়ি গরুর কদর ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব গরু সরবরাহ করা হতো। তবে এ বছর দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। ঈদ ঘনিয়ে এলেও কাপ্তাইয়ের হাটে সুনসান নীরবতা। হাটে দেখা মেলেনি গরু কিংবা ব্যাপারিদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন জটিলতার কারণে পাহাড়ি এলাকা থেকে ব্যাপারিরা গরু আনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছের কাপ্তাইয়ে গরু সরবরাহ বন্ধ রাখবেন। এতে করে গরুশূন্য হাটে ক্রেতা এবং ইজারাদারদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা।
স্থানীয় কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাপ্তাই হাটে ঈদুল আজহার ২০-২২ দিন আগে থেকেই বেচাকেনা শুরু হতো। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের নানা জটিলতা, হয়রানি বিভিন্ন নিয়মকানুনের ফলে পাহাড় থেকে আনন্দ মেলা মাঠের গরু আসছে না। এতে করে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, রাঙামাটির মাইনী, শুভলং, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, পানছড়ি, ফারুয়া, মারিশ্যা ও বরকল থেকে এ হাটে গরু আনা হতো। আসার পথে নিরাপত্তার দায়িত্বরত লোকজনকে বৈধ কাগজপত্র দেখালে গরু ছেড়ে দেয়। তবে গরু বিক্রির পর ইউনিয়ন কাউন্সিলের ছাড়পত্র পাওয়া সত্ত্বেও শহরে পৌঁছতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে কাপ্তাই থেকে যখন চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়, তখন পথে পথে প্রশাসনিক নানা সমস্য, হয়রানি ও জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই কাপ্তাইয়ের হাটে গরু কেনাবেচায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম শহরের গরু ব্যবসায়ী মো. সোলাইমান, রাউজানের শফিকুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, নানা জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীরা কাপ্তাই হাটে গরু না এনে রাঙামাটি সদর ও বিলাইছড়ি হয়ে রাজস্থলী উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে কাপ্তাইয়ে পশুর হাট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
স্থানীয় অনেক ক্রেতা প্রতি বছর কাপ্তাই পশুর হাট থেকে গরু কেনেন। এবার তাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। রহমান আলী, কবিরুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, কাপ্তাইয়ে আনন্দ মেলা মাঠে বিশ দিন আগ থেকে ইজারদাররা নানা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন গরুর খুঁটি আছে গরু নেই। পার্শ্ববর্তী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পশুর হাটে একটি গরু ক্রয় করে আনতে ইজারাদারকে হাজারে ১০০ হাসিল (খাজনা) দিতে হয়। এ ছাড়া ছাগল ৫০ টাকা করে দিতে হয়। কিন্তু কাপ্তাই হাটে একটি গরুর হাসিল ১০০ টাকা নেওয়া হয়। এতে কম দামে কাপ্তাই থেকে গরু কিনতে পারতাম। এবার আমাদের নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
আনন্দ মেলা হাটের ইজারাদার মনির হোসেন জানান, আমরা ৪ মাস যাবৎ স্থানীয় প্রশাসনের হয়রানি ও নানা জটিলতার মধ্যে পড়েছি। কাপ্তাইয়ে অবৈধ গরুর ব্যবসা হচ্ছে। আমরা সকল বৈধ কাগজ নিশ্চিত করে গরুর ব্যবসা করে আসছি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন, এসব সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান করে। কাপ্তাইয়ে পশুর হাট সুনামের সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।