সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার
কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪ ২০:৪০ পিএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪ ২০:৫৬ পিএম
নিখোঁজের ২২ দিন পার হলেও এখনও সন্ধান মেলেনি কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ে নাফ নদে কাঁকড়া আহরণ করতে যাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়ের দুই যুবকের। ভুক্তভোগী পরিবারের ধারণা, মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে সীমান্তে সক্রিয় হয়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের অপহরণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে মুক্তিপণ দাবি বা কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।
শুক্রবার (৭ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ওই দুই পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টেকনাফের আদিবাসী নেতা মণি স্বপন চাকমা।
নিখোঁজ যুবকরা হলেন- টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লম্বাঘোনা চাকমা পল্লীর বাসিন্দা মৃত উচামং চাকমার ছেলে ছৈলামং চাকমা এবং মৃত মংতাইন চিং তজ্ঞঙ্গার ছেলে ক্যামংথোএ তজ্ঞঙ্গা।
সংবাদ সম্মেলনে মণি স্বপন বলেন, ‘১৬ মে সকাল ৭টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হাউস দ্বীপের পাশে ৫ নম্বর গেট এলাকায় নাফ নদে স্থানীয় অন্য জেলেদের সঙ্গে কাঁকড়া আহরণ করতে যান পরস্পর আত্মীয় চাকমা সম্প্রদায়ের দুই যুবক। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ঘরে না ফেরায় স্বজনরা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে। সেই থেকে তারা কি জীবিত নাকি মৃত এ বিষয়েও নিশ্চিত নয়। এদিকে দীর্ঘ তিন সপ্তাহের পরও কোনো ধরনের সন্ধান না মেলায় একমাত্র উপার্জনক্ষম এই দুই যুবকের পরিবারে কান্নার ঢল পড়েছে।’
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের ধারণার বরাতে আদিবাসীদের এ নেতা বলেন, ‘মিয়ানমার অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধের জেরে সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের আটকে রেখেছে। তবে এখনও জিন্মি রাখা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে মুক্তিপণের দাবি বা কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। দুজনই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় বর্তমানে এ দুই পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
মণি স্বপন বলেন, ‘নিখোঁজদের স্বজনরা ঘটনার পরদিনই টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাবকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।’
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারে দিন দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে জানিয়ে আদিবাসীদের এ নেতা জানান, কিন্তু প্রশাসনের কাছে বারবার ধরনা দেওয়া হলেও তাদের উদ্ধারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে নিখোঁজ দুই যুবককে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু ও সাধারণ সম্পাদক প্রভংকর বড়ুয়া, আদিবাসী নেতা প্রভাত তজ্ঞঙ্গা আলোসহ নিখোঁজ ছৈলামং চাকমার মা ছুচিংছা চাকমা ও স্ত্রী চিনু চাকমা এবং ক্যামংথোএ তজ্ঞঙ্গার মা মাতাইন ছিং তজ্ঞঙ্গা ও স্ত্রী ছিংমালা তজ্ঞঙ্গা।
বিজিবির টেকনাফের ২-ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, এ ধরনের একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে খোঁজখবর নেওয়ার পরও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি জানিয়েছেন, একটি অভিযোগ থানায় জমা হয়েছে। বিষয়টি সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরও কোনো সুনিদির্ষ্ট তথ্য মিলছে না।