× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চনপাড়া নিয়ে নীরব ছিল সব পক্ষই

জামশেদ নাজিম ও শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২২ ১১:১৯ এএম

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২ ১৩:২৪ পিএম

চনপাড়া নিয়ে নীরব ছিল সব পক্ষই

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া বস্তির সব অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে ব্যক্তিটির নাম জড়িয়ে আছে, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। এলাকায় প্রকাশ্যে গোলাগুলি, অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির ঘটনায় সবার আগে নাম আসে এই বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বারের।

তারপরও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান মূলত ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু ‘অসাধু’ সদস্যের কারণে। এ বস্তি ঘিরে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলে এলেও এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসব পক্ষই নীরব ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, চনপাড়ায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখলের ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু এসব প্রতিরোধ কিংবা প্রতিবাদে কেউ এগিয়ে আসেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গণমাধ্যমও এতদিন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যাকাণ্ডের পর একযোগে সবাই সোচ্চার হয়েছে। স্থানীয়রা আরও বলছেন, চনপাড়ায় বেশিরভাগ মাদকের চালান ঢোকে নদীপথে। অভিনব কায়দায় স্থলপথেও আনা হয় মাদকের ছোট-বড় চালান। অস্ত্রের কেনাবেচাও চলে এখানে। চনপাড়ার ভেতরে শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। বজলু মেম্বারের ছত্রচ্ছায়ায় এসব মাদকের অন্তত ২০০ জন ডিলার রয়েছেন। ওই বস্তিতে মাসে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা হয়। জমি দখল ও চাঁদাবাজির বাণিজ্যও আছে কোটি কোটি টাকার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি মাসে চনপাড়া থেকে কয়েক কোটি টাকা চলে যায় থানা পুলিশ, ডিবি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির পকেটে।

এদিকে চনপাড়ায় অপরাধের তথ্য খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাইয়ে টানা চার দিন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ভয়ে বস্তি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল অনেক পরিবার। ওই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের হোতা হিসেবে নাম উঠে আসে বজলুর রহমানের। ওই ঘটনায় পুলিশ বজলুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশকিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। পরে রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মারুফ পরেশ বাগচি বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন।

এসআই আবদুল্লাহ আল মারুফের মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়। ৭ নম্বর আসামি বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বার সম্পর্কে এজাহারে বলা হয়দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছে এবং বাড়িতে অনেক লোক জমায়েত করা হয়েছে। ওই খবরের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল বজলুর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা বজলুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এরপর বজলুর চার তলা বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আর মামলার ১ নম্বর আসামি শাহজালালের কাছ থেকে কোমরে গোঁজা অবস্থায় একটি রিভলবার জব্দ করা হয়।

পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে আদালতে অভিযোগপত্রও দিয়েছে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে মামলাটি বিচারাধীন আছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এ মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলাটি নিয়ে পুলিশের হাতে আর কোনো কাজ নেই।

দুর্ভাগ্য হচ্ছে, কোনো ঘটনা ঘটার পর আমরা জানি

চনপাড়ার এমন অপরাধ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক অপরাধবিজ্ঞান সোসাইটির পরিচালক ড. জিয়া রহমান বলেন, একটি বস্তিতে রাতারাতি অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে না। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, কোনো একটা ঘটনা ঘটার পর আমরা জানি। এই চনপাড়ায় যে এত বড় একটা মাদকের আখড়া আছে, তা আরও আগে আমাদের জানা উচিত ছিল। একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা যেন শুধু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার দিকেই নজর দিয়ে স্বস্তি না খুঁজি। আমাদের প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিংয়ের দিকেও এগোতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে অপরাধ কমিয়ে আনা যাবে না।

চনপাড়া বস্তির অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের প্রচারে এখন মাদকের জন্য খুবই পরিচিত একটি স্থান, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনে চূড়ান্ত অর্থে আদৌ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? তাদের কৌশলগুলো সেখানে কতটা কার্যকর ছিল? তেমনটা না থাকলে শুধু পুলিশ নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দুুদকসহ রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। জল ও সড়কপথের জন্য সেখানে অভিযান পরিচালনা করা না গেলে নৌপুলিশ, থানা পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, প্রয়োজনে বিজিবিকে নিয়ে যৌথ অভিযানে চনপাড়ার মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ নির্মূল করা যেতে পারে।

সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

চনপাড়া বস্তি এলাকার অপরাধ দমনে পুলিশিং কৌশলের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কোনো এলাকার সবাই মাদক ব্যবসায়ী নয়। হাতেগোনা কয়েকজন অপরাধ করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে পুলিশকে। আর যদি কোনো জনপ্রতিনিধি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যান, সবার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা