প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪ ১০:৪৬ এএম
আপডেট : ৩০ মে ২০২৪ ১৬:২৬ পিএম
সৌদি আরব থেকে আনা খেজুরের বীজ থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার স্বজনপুকুর গ্রামে বাগান গড়েছেন জাকির হোসেন। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার স্বজনপুকুর গ্রামের জাকির হোসেন। জীবিকার তাগিদে পাড়ি দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও কুয়েতে। প্রায় দুই দশক প্রবাসজীবন কাটিয়ে ফিরে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন খেজুরের বীজ। এর আগে আয়ত্ত করেছিলেন চাষ পদ্ধতিও। বাড়িতেই চারা উৎপাদন করে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। চারা থেকে এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে গাছ। গাছে ঝুলছে খেজুরের ছড়া। তার সফলতার প্রশংসা এখন জেলাজুড়ে।
জাকির হোসেন জানান, ২০১৭ সালের শুরুতে ছুটিতে দেশে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন বিভিন্ন জাতের ১২ কেজি পাকা খেজুর। বীজ সংগ্রহ করে রোপণের পর আবার ফিরে যান কুয়েতে। পরে স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারেন চারা গজিয়েছে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি দেশে ফিরে থিতু হন। পরে স্বজনপুকুর গ্রামে বাড়ির ২০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ১৯টি চারা রোপণ করেন। আশানুরূপ ফলন পান তিনি। এখন দুই একর জমিতে খেজুর বাগান। বাগানে আজওয়া, মরিয়ম, খলিজি, মেডজুল, বারহি ও আম্বার জাতের খেজুর গাছ রয়েছে। এগুলোর বয়স চার থেকে ছয় বছর। খেজুর চাষের পাশাপাশি করছেন চারাগাছও। তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে আশপাশের অনেকেই বাগান করেছেন। অনেকে চারার জন্য অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে রেখেছেন। এ ছাড়া গাছে ফল এলেই প্রতি বছর ভিড় জমে দর্শনার্থীদের। অনেকে স্বাদ নেন খেয়েও।
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে থাকার সময়ই দেশের মাটিতে মরুর খেজুর চাষের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরীক্ষামূলক চারা উৎপাদন করি। ইউটিউব থেকে আরবি চ্যানেলে দেখে পরিচর্যা করি। একসময় সাফল্যের মুখও দেখতে পাই। এ বছর নয়টি গাছে ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে ১০০ কেজির অধিক খেজুর হয়। এসব খেজুর ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেড় হাজার চারা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। বাগানের জন্য প্রয়োজন উঁচু জমি। চারাগাছ রোপণের কয়েক বছরেই ফল আসতে শুরু করে। একটি গাছ ৭০- ৮০ বছর ফল দেয়।
স্থানীয় আবদুল আলীম ও আলমগীর হোসেন জনি বলেন, ‘বাড়ির কাছেই সৌদির খেজুর বাগান। গাছগুলোতে যে এত খেজুর হয়, কল্পনার বাইরে। খেজুরও অনেক সুস্বাদু। বাগান দেখতে প্রতিবছর বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।’
দিনাজপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলাম রাব্বী বলেন, ‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাগানের ভিডিও দেখেছি। জাকির হোসেনের সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। চারাগাছ সংগ্রহ করতে এসেছি। আমিও বাগান করব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, ‘লিচু-চালের জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর। জাকির হোসেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বীজ এনে খেজুরের বাগান করেছেন। মরু দেশের খেজুর এখন ফুলবাড়ীতেই ফলছে। তার বাগান পরিদর্শন করেছি। খেজুর দেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘জাকির হোসেন মরুর খেজুর দিনাজপুরের মাটিতে ফলিয়ে নজির স্থাপন করেছেন। খেজুর বাজারজাতসহ চারাগাছও বিক্রি করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’