নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪ ২০:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৪ ২১:০৭ পিএম
মেয়েকে হারিয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিকমালিকের বিচার দাবি করেন সুমির মা রহিমা বেগম। প্রবা ফটো
নওগাঁয় সুমি খাতুন নামে এক প্রসূতির সিজারের জন্য শহরের হাসপাতাল রোড এলাকার একতা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পেটে গজ রেখেই সেলাই করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুমিকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুবার আইসিইউতে নেওয়ার পর মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিকমালিকের বিচার দাবি করেছে প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
সুমির পরিবার ও ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়, ১৫ মে সকালে প্রসববেদনা শুরু হলে একতা ক্লিনিকে নেওয়া হয় সুমিকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতিবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন তানিয়া রহমান তনি। সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ডাক্তার তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট আদনান ফারুক।
সিজারের পরই সুমি তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগীর পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। রাত ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয় সুমিকে। সেখানে পরীক্ষা করে জানা যায় সুমির পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। ১৬ মে সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করা হয়।
স্থানীয় প্রতিবেশী ফারজানা খাতুন ও খালেদ বিন ফিরোজ বলেন, একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। সিজারের কারণে কীভাবে প্রসূতি মারা যায়। অবশ্যই ভুল অপারেশন বা ভুল চিকিৎসা হয়েছে। নইলে কেন উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে রেফার করা হলো। মাঝে মাঝে আমরা শুনতে পাই নওগাঁয় ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক এসব ডাক্তার ও ক্লিনিকমালিকদের।’
সুমি খাতুনের মা রহিমা বেগম বলেন, ‘অভিযুক্তরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে টাকার অফার দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাতে রাজি হইনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন প্রথমে সুমিকে দেখেছিল তখনোই বলেছিল এই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ, নওগাঁতে প্রোপারভাবে সিজার করা হয়নি। দুবার আইসিইউতে নেওয়ার পরও আমার মেয়েটাকে বাঁচানো গেল না। অভিযুক্ত ডাক্তার, ক্লিনিকমালিক ও এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আর যেন আমার সুমির মতো কারও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু না হয়।’
অভিযুক্ত ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। প্রয়োজনে ডাক্তারদের সংগঠন বা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমার যা বলার আমি কিছু দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছি। রাজশাহীতে সুমিকে নিয়ে যাওয়ার পর কী হয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই।’
এ বিষয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে বিষয়টি নিয়ে চিঠিও দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’