চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪ ১৮:০১ পিএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪ ১৮:৫৩ পিএম
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে চরফ্যাশনে ঘরবাড়ি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবা ফটো
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে নদ-নদীর জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। শত শত পুকুর ও মাছের ঘের, বসতঘর ডুবে গেছে। সোমবার (২৭ মে) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকেও চরফ্যাশনে প্রবল বেগে বাতাস ও বর্ষণ চলে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পুরো চরফ্যাশন গত দুদিন থেকে এখন বিদ্যুৎবিহীন। এ উপজেলার জনগণ কখন বিদ্যুতের দেখা পাবে তা এখনও নিশ্চিত না। বেশির ভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে অনেক তথ্য এখনও অজানা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের চলাচল রাস্তায় গাছপড়ে থাকায় বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার-চরমানিকা, ঢালচর, চরনিজাম, চরকুকরি, মুজিব নগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। পানির ৩-৪ ফুট নিচে ছিল মানুষের বসতঘর। এতে এখানকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ঘরের আসবাবপত্রসহ অন্য জিনিসপত্র। অনেকে খাওয়া দাওয়া তো দূরের কথা ঘরের চুলায় আগুন জ্বালাতে পারেনি।
উপজেলার ঢালচরের স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরে আলম বলেন, ‘জোয়ারের পানির চাপ দেখে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় দুর্গত এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তবে গরু-ছাগল নিয়ে তারা বিপাকে পড়ে ছিল। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গরু-ছাগল মুজিব কিল্লায় রাখা হয়েছে। তবে রবিবার রাত এবং সোমবার সকালের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে অনেক বসতঘর হেলে পড়েছে।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে রাতে আবহাওয়া খারাপ হয়। রবিবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব শুরু হয়ে ঝোড়ো হাওয়াটি ওঠে। ঢালচরের পুরো ইউনিয়নটি পানিতে প্লাবিত হয়। এটা অনেকটা টর্নেডোর মতো ছিল। এতে ঢালচর ইউনিয়নের বেশকিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, গাছপালা উপড়ে যায়। গত দুদিন পর্যন্ত এখানকার মানুষের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলেনি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ চলছে।
রেমালের তাণ্ডবকে ১৯৯১ সালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে শক্তিশালী দাবি করে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকুকরি-মুকররি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ঝড়ে তার ইউনিয়নের বহু ঘর-বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। টিনের ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গাছের ওপর ফেলেছে। বেশকিছু কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করা হবে।
চরফ্যাশন পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মিজানুর রহমান বলেন, ঝড়ে বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ফলে এসব ঠিক না করে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যবস্থা সচল করা যাচ্ছে না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, রেমালের প্রভাবে চরফ্যাশনের ২১টি ইউনিয়নে বেশকিছু এলাকায় মাছের ঘের, পুকুরের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক বলেন, বেশকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। এ ছাড়া পাছপালা উপড়ে পড়েছে। তবে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আমরা কাজ করছি।