প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৪৫ পিএম
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৪০ পিএম
‘ধর্ম ব্যক্তির হয়, রাষ্ট্রের হয় না। রাষ্ট্রের ধর্ম নেই, সেটা আমরা ভুলে যাচ্ছি’ বলে মন্তব্য করেছেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী অ্যারোমা দত্ত।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে শহীদ সন্তানদের সংগঠন ‘প্রজন্ম একাত্তর’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘শহীদদের রক্তের দাম আমাদের দিতে হবে। দায় আছে আমাদের। সেই দায়িত্ব যেন দেশ-সমাজ নেয়। যারা যুদ্ধ করেছেন, তারা প্রায় সবাই চলে গেছেন। আমরা যারা শহীদ পরিবারের সন্তানরা আছি, সেখানে আমরা ছাড়া কেউ বলার নেই; বলার কারণ উঠে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সে চেতনা সেভাবে গড়ে উঠেনি, গড়ে তুলতে দেয়নি। আমাদের সংবিধানে আছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কিন্তু কী হচ্ছে? গণহত্যার স্বীকৃতিই না শুধু, বিচারও চাই। এই বিচারের দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে চাই। আমরা আর বেশিদিন থাকব না, তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে।’
এ সময় তারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদের উত্থান ঠেকাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর একটি চেহারা। বিডিপি বা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত দাবি করে সংগঠনের নেতারা পার্টি যেন নিবন্ধন না পায় সে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি দাবি করেন, ‘এখনকার ইসলাম জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামালের পালন করা ইসলাম নয়। এটা উগ্রাবাদী ইসলাম। আমাদের বাপ-দাদারা এভাবে ধর্ম পালন করতেন না। মেয়েদের কপালের টিপ, শাড়ি পরা, পোশাক থেকে শুরু করে ভাষার প্রয়োগেও আমরা যা দেখি তা মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধে যায়। এতে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি একেবারে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। ষাটের দশকে বাংলাদেশে কেউ বাংলায় কথা বলা শুরু করলে বাংলায় শেষ করত। এখন বাংলা, ইংরেজি মিলিয়ে কথা হয়। বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূলনীতি একদিন বাস্তবায়ন সম্ভব না, সেদিকে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’
প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি আসিফ মুনীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিদের টাকা আছে। তারা নানানভাবে নিজেদের আর্থিক জায়গা তৈরি করেছে। সেগুলো বিদেশ থেকে আসছে। জামায়াতে ইসলামী সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের সেরকম আর্থিক সাপোর্ট নেই। ওয়াজে অনেক লোকের সমাগম হয়, কিন্তু তাদের অনুষ্ঠানে চেয়ার থাকে শূন্য।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কষ্ট করার একটাই কারণ, একটুখানি চেতনা জনগণের মনে জাগ্রত হোক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। আমাদের লোভ-লালসা দেখানো হয়েছে, কিনে নেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের নীতির জায়গায় সবসময় এক থাকব।’
অনুষ্ঠানে শহীদ ড. আজহারুল হকের স্ত্রী সালমা হক বলেন, ‘পরের প্রজন্ম অনেক কিছু জানে না, দেখেনি। আমাদেরই পরের প্রজন্ম হয়তো সেই চেতনাকে আমাদের মতো ধারণ করতে পারবে না। আমরা যে ঢাকা দেখেছি সেটাই এখন নেই।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রজন্ম একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ কাজী শামসুল হকের ছেলে সাইফুদ্দিন আব্বাস।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সদস্যসহ অনেকেই।