আনোয়ারা উদ্যান রক্ষায় সংহতি সমাবেশ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪ ২০:০৯ পিএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪ ২০:১৬ পিএম
ফার্মগেটে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান পার্ক রক্ষার দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে অন্যদের সঙ্গে যোগ দেয় শিশুরাও। প্রবা ফটো
দুই বছর কোথাও খেলাধুলা করতে পারছে না তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা ১২ বছর বয়সী নবীন। রাজধানীর একটি মাদরাসার এই ছাত্র জানায়, তার মাদরাসায় খেলার কোনো জায়গা বা মাঠ নেই। ফার্মগেটের শহীদ আনোয়ারা উদ্যানে আগে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেত সে। এই উদ্যান ‘দখল’ হওয়ার পর থেকে অনেকদিন ধরে এলাকার কোথাও খেলার জায়গা পাচ্ছে না।
শনিবার (১৮ মে) ফার্মগেটে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান পার্ক রক্ষার দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে যোগ দেয় শিশু নবীন। অন্যদের মতো তারও দাবি— খেলার জন্য মাঠ চাই।
কথা হয় তার সঙ্গে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে সে বলে, ‘সমাবেশ দেখে মাকে বলে এখানে আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছি। আমি খেলার জন্য জায়গা চাই।’
শুধু নবীন নয়, প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিল তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ধূলি। সে বলে, ‘স্কুলে খেলার মাঠ নেই্ তাই। খেলার জন্য একটা জায়গা দরকার।’
সমাবেশে আলোচকেরা বলেন, সাময়িক ব্যবহারের কথা বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের গাছ কেটে পুরো উদ্যান দখল নিয়েছে। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষে উদ্যান ফিরিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এখন বাণিজ্যিক প্লাজা তৈরি করে জায়গাটি নিজেদের করে নিতে চাইছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ফার্মগেট ফুট ওভারব্রিজ উদ্বোধনের সময় এই উদ্যান উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন কোনও অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
তাই ‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যান ফেরত দিতে ৩০ দিনের আল্টিমেটাম দেন। একই সঙ্গে রাজধানীর অন্যান্য উদ্যানগুলোও দখলমুক্ত করে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান সমাবেশে অংশ নেওয়া আলোচকরা।
সমাবেশে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, মানবাধিকার কর্মী শিরিন হক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত দে, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, শিক্ষা আন্দোলনের নেতা রুস্তম আলি খোকন, ফার্মগেট এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ অংশ নেন।
বিআইপির সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় একটি করে পার্ক থাকা উচিত। সে জায়গায় যা আছে তাও হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অক্সিজেনের আধার কেড়ে নিতে চায়। বলা হয়েছিল- সাময়িক সময়ের জন্য পার্কটিতে মেট্রারেলের সরঞ্জাম রাখা হবে কিন্তু এখন বলা হচ্ছে স্টেশন প্লাজা করা হবে। লুকিয়ে কিছু করা যাবে না এখানে। প্রকৃতির মাধ্যমে উন্নয়ন করতে হবে।’
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক সৈয়দা রত্না বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের মধ্যে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা করেছি কিন্তু এখনও সেই মাঠকে পুলিশের জায়গা বলা হয়। পুলিশ চাইলে সেখানে আবার কিছু নির্মাণ করারা চেষ্টা করতে পারবে। এ শহরে অনকে প্লাজা আছে, শপিং মল, মার্কেট আছে; সেসবের আর প্রয়োজন নেই। একের পর এক উদ্যান চলে যাচ্ছে, এতে করে আর ঢাকা শহরের বাচ্চারা প্রজাপতি দেখবে না, পাখি দেখবে না, সবুজ ঘাসে খেলবে না। এভাবে শিশুরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি গাছের ছায়ায় বিশ্রামের জায়গা নেওয়ার মতো জায়গাও হারিয়ে যাচ্ছে।’
রুস্তম আলী খোকন বলেন, ‘কয়েক বছর পূর্বে বলা হয়েছিল এ উদ্যান আবার ফেরত দেওয়া হবে। মেয়রও আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেটা না করে এখন এখানে প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই একটা মাঠে কয়েক এলাকার ছাত্রছাত্রীরা খেলিাধুলা করত; এখন তা আর পারছে না। উন্নয়নের নামে শিশুদের খেলার জায়াগ বন্ধ করে দেওয়া হলো।’
‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ‘আমরা ৩০ দিন সময় দিয়েছি। এটা অনেক সময়। মাঠে যা কিছু আছে সব অস্থায়ী কাঠামো। সেগুলো সরিয়ে নিতে এতদিন লাগবে না। আমরা উদ্যান ফেরত চাই।’