× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডিবির সংবাদ সম্মেলন

মিল্টন ‘সাইকোপ্যাথ’, ছুরি-ব্লেড দিয়ে নিজেই করতেন ‘অপারেশন’

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ২১:১৩ পিএম

আপডেট : ০৫ মে ২০২৪ ২১:৩৭ পিএম

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ফাইল ফটো

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ফাইল ফটো

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার চিকিৎসার নামে ব্লেড ও ছুরি দিয়ে মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই অস্ত্রোপচার করতেন। ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে ফেসবুকে প্রচার চালালেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১০০ মরদেহ দাফনের কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আশ্রমে থাকা অসহায়দের নিয়ে ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে যে টাকা তিনি আয় করতেন সে টাকা তাদের পেছনে ব্যয় করতেন না বলে জানিয়েছে ডিবি।

শুই তাই নয়, ডিবি বলছে— মিল্টন সমাদ্দার একজন ‘মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ’। আশ্রমের টর্চার সেলে তিনি মানুষকে পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। এভাবে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন তিনি।

নিজের আশ্রয়ে রেখে অসহায় ও অসুস্থদের কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে বিক্রি করে দেওয়া, তাদের নির্যাতন করা, মৃত ব্যক্তির সনদ দেওয়াসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার মিল্টনকে নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-আর-রশীদ। রবিবার (৫ মে) দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও রোগাক্রান্তদের ধরে আনতেন। তাদের দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান নিতেন, যা এসব মানুষদের পেছনে খরচ করতেন না। বরং তারা অসুস্থ হলে নিজেই তাদের চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন।’

মিল্টনের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি জমা আছে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘তার অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা। কিন্তু এই টাকা তিনি খরচ করেননি। এ বিষয়গুলো আমরা তদন্তে নিয়ে এসেছি। তিনি যদি মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে থাকেন, তাহলে তো এই টাকাগুলো খরচ করার কথা, রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোর কথা। কেউ মারা গেলে হাসপাতালকে জানাবে, থানাকে জানাবে। যদি মৃতের ঠিকানা না থাকে তাহলে মিডিয়ার মাধ্যমে জানাবে। কিন্তু তিনি কিছুই করেননি।’

৯০০ মরদেহ দাফনের মিল্টনের দাবির বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি ৯০০ লাশ দাফন করেননি। তিনি ১৩৫ থেকে ১৪০টি লাশ দাফন করেছেন। ফেসবুকে ৯০০ লাশ দাফনের কথা বললে প্রচুর টাকা পাবেন, তাই তিনি বেশি প্রচার করেছেন। কিন্তু এই ১৩৫ জনের রেজিস্ট্রিও তিনি দেখাতে পারেননি। তাই আমরা এই বিষয়গুলো নজরে নিয়ে তদন্ত করছি।’

‘আমাদের তদন্ত এখনও বাকি আছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই টাকাগুলো কোথায় খরচ বা পাচার করা হতো, কেন মানুষ পেটাতেন তিনি, কেন তিনি ডাক্তার ডাকতেন না, কেন তিনি রোগীদের হাসপাতালে পাঠাতেন না; এত মৃত্যুর ঘটনার জবাবদিহি মিল্টনকে করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

‘দায় এড়ানোর সুযোগ নেই মিল্টনের স্ত্রীর’

রবিবার আলোচিত মিল্টনের স্ত্রী মিতু হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নেয় ডিবি। কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিতুকে নিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘তার স্ত্রী একজন নার্স। নার্স হয়েও চাইল্ড অ্যান্ড এইজ কেয়ারে তার স্বামীর পৈশাচিক কাজের প্রতিবাদ করেননি। ফলে এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই মিতু হাওলাদারের।’

তবে মিল্টনের অর্থসংশ্লিষ্ট লেনদেন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান।

হারুন-আর-রশীদ বলেন, ‘আমরা মিল্টনের স্ত্রীকে তার স্বামীর আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের নানাভাবে নির্যাতন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার স্ত্রী বলেছেন— এটি মোটেও ঠিক হয়নি। এজন্য তার বিচার হওয়া দরকার। মিল্টনের আশ্রমে থাকা অসুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হতো এবং ডাক্তারের কাছে নেওয়া হতো কি-না, এ নিয়েও তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। তিনি জবাবে বলেছেন, তার কথা মিল্টন শুনত না।’

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনও প্রায় ২ কোটি টাকা রয়েছে; যা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তথ্য পেয়েছে ডিবি। বিষয়টি নিয়ে তার স্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে ডিবিকে তিনি জানিয়েছেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ফাউন্ডেশনের কোনোটার সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করেনি তার স্বামী। তিনি সরকারি চাকরি করার কারণে এটি করেননি বলেও জানান তার স্ত্রী।’

মিল্টন দোষী কি না প্রমাণ করবে আদালত : স্ত্রী

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিল্টনের স্ত্রী মিতু হাওলাদার বলেন, ‘মিল্টনের বিরুদ্ধে সেসব অভিযোগ এসেছে সেসব বিষয় জানতে চেয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে এসব বিষয় আমার জানা নেই। আমি আইনের ওপর শ্রদ্ধাশীল। আইন যেটা চাইবে, সেটাই হবে। আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। সে দোষী কি না- তা প্রমাণ করবে আদালত।’

আরেক মামলায় আরও ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন

রবিবার মিল্টন সমাদ্দারকে মিরপুর মডেল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা একটি মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তারের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড আদেশ দেন।

সম্প্রতি আলোচিত ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অসহায় ও অসুস্থদের কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে বিক্রি করে দেওয়া, তাদের নির্যাতন করা, মৃত ব্যক্তির সনদ দেওয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুরের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগ। পরদিন তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। ২ মে মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। আশ্রমে জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।

তার বিরুদ্ধে তিনটির মধ্যে অপর মামলাটি হয়েছে আশ্রমের টর্চার সেলে আশ্রিতদের মারধরের অভিযোগে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা