প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৯:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৯:৫২ পিএম
গ্রেপ্তারের পর আসামি মনির হোসেন। প্রবা ফটো
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ‘মনির হেয়ার স্টাইল’ নামে একটি সেলুন আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোপালপুরের মনির হোসেনের। সেখানে কাজ করেন বেশ কয়েকজন নরসুন্দর। সেলুনের মালিক মনিরও নরসুন্দরের কাজ করেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল মনিরের, কিন্তু বাদ সাধেন আপন চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান রুবেল। বয়সে রুবেল মনিরের চেয়ে ৬ বছরের বড়। জমিজমা নিয়ে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। রুবেল বিভিন্ন সময় নানাভাবে মনিরকে হয়রানি করতেন। প্রায়ই সেলুনে গিয়ে জোর করে মনিরের রোজগারের টাকা নিয়ে আসতেন। অনেক সময় টাকা দিতে না চাইলে সেলুন বন্ধ করে দিতেন রুবেল। এতে রুবেলের প্রতি ক্ষোভ জন্মায় মনিরের মনে। দিন দিন ছাড়িয়ে যায় তার ক্ষোভ আর ক্রোধের মাত্রা।
একপর্যায়ে সেই ক্ষোভ থেকেই খুনি বনে যান অতিষ্ঠ মনির। সেলুনেই রুবেলকে বিদ্যুতের তারে শক দিয়ে ও পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। মনিরের শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তার ও হাতুড়ি।
গত ২ মে সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ আইসক্রিম ফ্যাক্টরির গলি থেকে ৯৯৯-এ স্থানীয়দের ফোনের ভিত্তিতে একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার লাশটি তার স্বামী হাবিবুর রহমান রুবেলের বলে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহতের মা মিনু বেগম খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে রুবেল হত্যার চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) খিলগাঁও জোনের এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকায় রুবেল নানাভাবে মনিরকে হয়রানি করতেন। এমনকি নিজে কাজ না করে মনিরের আয় করা টাকা জোর করে নিয়ে নিতেন। টাকা না পেলে মনিরের সেলুন বন্ধ রাখতে বাধ্য করতেন। এতে মনির ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলসহ পাশাপাশি এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা ও বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িত মনির হোসেনকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান। বলেন, ‘রুবেলের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোপালপুরে। খিলগাঁওয়ের উত্তর মেরাদিয়া পুরাতন কমিশনার রোড এলাকায় থাকেন। আর তার চাচাতো ভাই রুবেলের কোনো পেশা ছিল না। স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব খাটিয়ে ফিটিংবাজি করে বেড়াতেন। গ্রামের বাড়িতে মনিরের পরিবারের সঙ্গে জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ থাকায় ঢাকায় বসে সে নানাভাবে হয়রানি করত। তার টাকার দরকার হলেই নানাভাবে হয়রানি করে টাকা নিত।’
হায়াতুল ইসলাম দাবি করেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনির হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ১ মে রাত ১১টার দিকে চুল কাটানোর জন্য মনির হেয়ার স্টাইল সেলুনে আসেন রুবেল। চুল কাটার সময় বিদ্যুতের তারে শক দিয়ে ও পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন মনির। এরপর কমিশনার গলি এলাকার একটি তোশকের দোকান থেকে তোশক এনে লাশ বস্তায় ভরে সেই বস্তা তোশকে পেঁচিয়ে পাশের গলিতে ফেলে দেয়।’
তীব্র ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে ডিসি বলেন, ‘চাচাতো ভাইকে হত্যার বিষয়ে মনির জানান, জমিজমা ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ তাদের। রুবেল কাজ করত না। বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করত। টাকা না পেলে ঝগড়াবিবাদে জড়াত। কিছুদিন আগেও টাকা না দেওয়া ১৫ দিন সেলুন বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। পরে ১২ হাজার টাকা দেওয়ার পর সেলুন খুলতে দেয়। সবকিছু মিলিয়ে মনির ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে রুবেলকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজছিল।’
‘গত ১ মে রাতে রুবেল চুল কাটাতে এলে মনির সব কর্মচারীকে ছুটি দিয়ে রুবেলের চুল কাটতে শুরু করে। চুল কাটার একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে রুবেলকে বৈদ্যুতিক তারের শক দেয়। এতে রুবেল অচেতন হয়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে লাশটি চটের বস্তায় ভরে একটি তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলে আসে। আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে’, যোগ করেন এই উপপুলিশ কমিশনার।