প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৪ পিএম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৬ পিএম
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত মাহিন আহমেদ।
রাজধানীর উত্তর মুগদার বাসা থেকে বের হয়ে পাশে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয় ১৩ বছর বয়সী মাহিন আহমেদ। মা জোসনা বেগম যেতে নিষেধ করলে মাকে বলে— ‘চাচার বাসায় যাচ্ছি। কিছু সময় খেলাধুলা করে ফিরে আসব।’ ঘরে মাহিমের ফেরা হয়েছে ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।
বৃহস্পতিবার রাতে মুগদার মদিনাবাগ এলাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ি ধাক্কায় নিহত হয় আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্র।
গাড়ির ধাক্কায় সড়কে ছিটকে পড়লে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মাহিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা জোসনা বেগম ও বাবা মাসুদ আহম্মেদ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে সন্ধ্যায় বলল, সে চাচার বাসায় যাবে। আমি মানা করে বললাম, কাল সকালে যেও। মাহিন বলল, খেলাধুলা করে সন্ধ্যায় চাচার বাসায় যাবে। আর ফিরল না।’
মাহিনের ভাই মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘মাহিন তার এক বন্ধুর বাসায় যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। হেঁটে যাওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। ট্রাকের ধাক্কায় মাহিন ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
জানা গেছে, মাহিনের বাবা মো. মাসুদ আহম্মেদ পেশায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী। পরিবারের নিয়ে মুগদার মদিনাবাগ মামা ভাগ্নে গলিতে থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মাহিন ছিল দ্বিতীয়।
মুগদা থানার এসআই জয়নাল আবেদীন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মুগদার মদিনাবাগ এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার পথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারায় মাহিন আহমেদ।
এই ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করা হচ্ছে।
দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস মেয়রের
নিহত মাহিনের পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে গতকাল শুক্রবার মুগদায় তার বাসায় যান ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নুর তাপস। এসময় এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা দেন তিনি। একই সঙ্গে মাহিনের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত। আমরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি। ছোট্ট শিশু হারানোর ঘটনায় বাবা-মাকে কোনো ভাষাতেই শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। আমরা নিহতের পরিবারের পাশে থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা নেওয়া হয়েছে। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাইছি। এ ঘটনায় যেন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু বিচার হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’
মাহিনকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি নির্ধারিত চালক না চালিয়ে চালাচ্ছিলেন অন্য চালক।
এমন ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে তাপস বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি চালানো হচ্ছিল। আমরা এ ধরনের অনিয়ম কোনোভাবে বরদাশত করব না। এ ঘটনায় কঠোরতর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় আগেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। জড়িতদের চাকুরিচ্যুত করেছি, ছাঁটাই করেছি। আবার অনেক নতুন নিয়মিত গাড়িচালক নিয়োগ দিয়েছি। ফলে বিগত ২ বছর করপোরেশনের গাড়ি দ্বারা কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। গতকালের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা আমাদেরকে অত্যন্ত শোকাহত করে তুলেছে। এবারও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিব। যাতে করে এ ধরনের দুর্ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’