ফয়সাল খান
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২৬ পিএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৩ পিএম
তাপমাত্রা নিয়ে গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
রাজধানীর তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ৭ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা অন্তত ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গাছ ও জলাশয়হীন এলাকায় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন গবেষকরা। এর মধ্যে মহাখালী, গুলিস্তান ও ধানমন্ডিতে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পাওয়া গেছে। সাত বছরের ব্যবধানে বেড়ে গেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০১৭ ও ২০২৪ সালের ঢাকা শহরের তাপমাত্রা নিয়ে গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। গবেষণাটি চলতি মাসে সম্পন্ন হয়েছে তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রকাশ হয়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালেও গ্রীষ্মকালে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রির নিচে ছিল। এখন ঢাকায় গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে আবার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বেশি।
গত ৭ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৭ সালে ডিএসসিসির গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি এবং ২০২৪ সালে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অপরদিকে একই সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৭ সালে ডিএনসিসি এলাকার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে এসে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়।
ডিএসসিসি এলাকার যেসব স্থানে গাছ ও জলাধার আছে, সেখানে ২০১৭ সালের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গাছ ও জলাশয়বিহীন এলাকায় ওই বছর তাপমাত্রা ছিল ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে এসে গাছবিহীন এলাকার গড় তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা থাকলেও গাছ ও জলাশয় থাকা এলাকাগুলোতে এ বছর ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেয়েছেন গবেষকরা।
ডিএনসিসি এলাকায় গাছ ও জলাশয় থাকা স্থানে ২০১৭ সালে তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০২৪ সালে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গাছ ও জলাশয় ছাড়া এলাকায় ২০১৭ সালে গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০২৪ সালে বেড়ে হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সবচেয়ে বেশি তাপ মহাখালীতে
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, মহাখালী এলাকায় ২০১৭ সালে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত ৭ বছরের ব্যবধানে এই এলাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গুলিস্তানে ২০১৭ সালে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে এসে ৬ ডিগ্রি বেড়ে এই এলাকার তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ধানমন্ডি এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৫০ ডিগ্রি। ২০২৪ সালে অর্থাৎ সাত বছরে বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০১৭ সালে মতিঝিল এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২৪ সালে এসে বেড়েছে ৩৯ দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। অর্থাৎ গত সাত বছরের ব্যবধানে এই এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ দশমিক ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাছাড়া তেজগাঁও, মিরপুর-১০, ফার্মগেট এলাকায় গত ৭ বছরের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৩ ডিগ্রির বেশি।
গবেষণা সম্পর্কে ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে রাজধানীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেল। এই তাপমাত্রা এক দিন বা দুই দিনে বাড়েনি। এটি দীর্ঘদিনের পরিবেশ দূষণের ফসল। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ন, বাতাস সঞ্চালন না হওয়া, সবুজ নিধনসহ নানা কারণে প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জলাধার ও সবুজের উপস্থিতি সাধারণত কোনো এলাকাকে শীতল রাখে। কিন্তু আমাদের শহরের আয়তন অনুযায়ী সেই পরিমাণ জলাধার ও সবুজায়ন নেই। অপরিকল্পিত বিল্ডিং গড়ে ওঠার কারণে বায়ুপ্রবাহ ঠিক নেই।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, সবুজ এলাকা ও জলাশয় বাড়াতে হবে। ভবন নির্মাণের সময় কাচের ব্যবহার পরিহার করে উন্নত মানের ইট ব্যবহার করতে হবে। ভবন ডিজাইনের সময় এসিনির্ভরতা বাদ দিয়ে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ঢাকা মহানগরে ২০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, সেখানে আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম। আর জলাধার থাকা প্রয়োজন ১০ থেকে ১২ ভাগ, কিন্তু আছে ২ দশমিক ৯১ ভাগ।