× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ প্রাণীরা

এটিএম শামসুজ্জামান

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩১ পিএম

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪০ পিএম

বুধবার দুপুরে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে তোলা। ছবি : আরিফুল আমিন

বুধবার দুপুরে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে তোলা। ছবি : আরিফুল আমিন

সারা দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এই তীব্র তাপপ্রবাহে সৃষ্ট ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। শুধু মানুষই নয় একই অবস্থা জাতীয় চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, জলহস্তীসহ বিভিন্ন প্রাণীরও। লোহার খাঁচার স্বল্প পরিসরের বন্দিজীবনে স্বাভাবিক চলাফেরা বাদ দিয়ে অনেকে একটু প্রশান্তি পেতে ঘন ঘন গা ভেজাচ্ছে পানিতে অথবা আশ্রয় নিয়েছে ছায়ায়। রোদের খরতাপে পাখিদেরও হাঁসফাঁস অবস্থা। পাখিরা খাঁচার অভ্যন্তরে দেয়া কৃত্রিম ছাউনির নিচে বসে আছে নীরবে। তবে চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের সুস্থ রাখতে ও পানি স্বল্পতা রোধে নিয়মিত স্যালাইনসহ ওয়াটার থেরাপি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। 

গতকাল জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, চঞ্চল চিত্রা হরিণগুলো দলবেঁধে গাছের ছায়ায় অথবা শেডের ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে চলে এসেছে সীমানা প্রাচীরের কাছাকাছি, গাছের ছায়ায় হাঁটাহাঁটি করছে অলসভাবে। ময়ূর, উটপাখি, বক রোদে হাঁসফাঁস করছে, অনেকে ছায়ায় বসেছে ক্লান্তভাবে। খাঁচার ভেতরে থাকা বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারটি ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে। সিংহ দম্পতিরও একই অবস্থা। বানর, মুখপোড়া হনুমান একটু পর পরই নিজেদের ভিজিয়ে নিচ্ছে খাঁচার চৌবাচ্চার পানিতে। অজগরটি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে খাঁচার এক কোনায় চুপ হয়ে আছে তার ভারী শরীর নিয়ে। বেশিরভাগ জেব্রা, গাধা, জিরাফগুলো নিজেদের যেন বন্দি করেছে নিজেদের শেডগুলোতে। কয়েকটি গাছের ছায়ায় বসে আছে নীরবে। কোনো চঞ্চলতা নেই তাদের মাঝে। মায়া হরিণটি যেন গাছের ছায়ায় ঘাসের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। শকুনগুলো তীব্র গরমে পাখা ঝাপটিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি আর চিৎকার করছে। বেশিরভাগ কুমিরের দেখা মেলা ভার। ছোট ছোট কয়েকটি কুমিরের বাচ্চা নিজেদের পানিতে ডুবিয়ে রেখেছে। কয়েকটি জলহস্তী নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে জলাধারের ঘোলা পানিতে। কয়েকটি অলস রয়েছে গাছের ছায়ায় নীরবে দাঁড়িয়ে। 

গত ১১ এপ্রিল ঈদের দিন চিড়িয়াখানায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মাহুতের ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় হাতিগুলোকে নিজ নিজ শেডের মধ্যে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দাবদাহে তারাও অতিষ্ঠ, পানির জন্য হাঁসফাঁস করছে। হাতির জন্য তৈরি জলাধারটি পানি শূন্য। দেখেই মনে হয় বেশ কয়েক মাস হলো সেখানে পানির একটি ফোঁটাও পড়েনি। 

অতিরিক্ত গরমের কারণে চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের চাপও অনেক কম। চিড়িয়াখানার ক্যান্টিনগুলোও প্রায় ফাঁকা। বেশ কয়েকজন হকার পানি ও আইসক্রিম বিক্রির জন্য হাঁকডাক করলেও দর্শণার্থী কম থাকায় বেশিরভাগ সময় অলসই কাটছে তাদের। 

মিরপুর বাউনিয়াবাঁধ এলাকা থেকে আসা মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, কয়েক বছর আগে একবার এসেছিলাম। আজ ছেলেটাকে নিয়ে এলাম। কিন্তু এ প্রচণ্ড গরমে বাঘ বা অন্য প্রাণীরা শরীর ডুবিয়ে, আবার কেউ মুখ ডুবিয়ে গরম থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেকে খাঁচার ভেতর নিজেদের শেডের ভিতরে অথবা ছায়ায় বসে আছে। তীব্র গরমে ছেলেটাকে প্রশান্তি দেওয়ার তাগাদায় এসেছিলাম অথচ জীবজন্তু ঠিকমতো দেখতে পারল না। 

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা দর্শনাথী শফিকুর রহমান বলেন, মিরপুরের পল্লবীতে বোনের বাসায় বেড়তে এসেছিলাম। ছোট মেয়েটার বায়নায় আজ চিড়িয়াখানায় এলাম। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত গরমে কিছুই ভালো লাগছে না। পশুপাখিগুলোও ঠিকমতো দেখতে পারলাম না। বেশিরভাগ পশুই প্রাণচাঞ্চল্যহীনভাবে শুয়ে-বসে আছে। চিড়িয়াখানার শিশুপার্কটিতেও শিশুদের জন্য তেমন কোনো রাইড নেই। যে কয়েকটি আছে তারও টিকিটের দাম চড়া। চিল-শকুনদের জন্য দেওয়া খাবারগুলো যেন পচে গেছে। বাঁদরের জন্য দেওয়া খাবারেরও একই দশা। 

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, গত কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে সারা দেশের মানুষই অতিষ্ঠ। ঢাকা চিড়িয়াখানার ৭৫ শতাংশ এলাকাই বনভূমি হওয়ায় বাইরের থেকে ২-৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু এবার উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রাণীদের প্রাণবন্ত রাখতে বাড়তি খেয়াল রাখতে হচ্ছে। বাঘগুলো নিজেদের খাঁচার ভেতরের চৌবাচ্চায় প্রতিদিনই দুই-তিনবার নেমে শরীর ঠান্ডা করে। এ কারণে আমরা নিয়মিত ওই পানি পরিবর্তন করে দিচ্ছি। জলহস্তীর জন্য চৌবাচ্চায় নিয়মিত ঠান্ডা পানির প্রবাহ রেখেছি। এ ছাড়াও ওরা কাদামাটি নিয়ে নিজেদের শরীরে লেপন করে সেজন্য কাদামাটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে প্রাণীগুলো পানিতে থাকতে বেশি পছন্দ করে সে প্রাণীগুলোর চৌবাচ্চার পানি ঠান্ডা রাখায় বার বার পরিবর্তন করে দিচ্ছি। কোনো কোনো প্রাণী শরীরে পানি ছিটিয়ে তাকে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করেছি। কোনো কোনো  শেডের ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য বস্তা ভিজিয়ে রেখে দিয়েছি। পানিশূন্যতা দূর করতে বারবার খাবার স্যালাইন ও পানি খাওয়ানো হচ্ছে। ইলেকট্রোলাইট দেওয়া হচ্ছে। শরীর শীতল করার জন্য ভিটামিন-সি খাওয়ানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাণীদের দেখভালের জন্য কেয়ারটেকার রয়েছে। তারা তাদের নিজ নিজ খাচার প্রাণীগুলোকে দেখভাল করেন। খাঁচার প্রাণীর যেকোনো সমস্যা তারা সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানদের অবগত করেন। যদি কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয় সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের  ভেটেরিনারি টিম তার সেবা-শুশ্রূষা করছে। প্রাণীটি অসুস্থ হয় তাহলে প্রথমে চিড়িয়াখানার নিজস্ব ডাক্তার তার চিকিৎসার দ্বায়িত্ব পালন করেন। তবে বেশি অসুস্থ হলে সে ক্ষেত্রে প্রাণীটিকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে কোনো প্রাণী যেন হিট স্ট্রোক না করে সেজন্য আমরা বাড়তি নজরে রাখছি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা