× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভা

ঢাকার চারপাশে হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন চার উপশহর

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪১ পিএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৪ পিএম

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ভবন। ছবি: সংগৃহীত

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ভবন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং নির্দেশনার পরও ঢাকা শহরের চারদিকে চারটি উপশহর গড়ে ওঠেনি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে ছিল। অবশেষে চারটি উপশহর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আটটি স্থানের প্রস্তাব দিয়েছে। সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে রাজউকে নিয়োগ দিয়েছেন। তার প্রথম কাজ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা। এ ছাড়া রাজউকে ভালো কিছু করার জন্য সবকিছু ডিজিটাল করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকার রূপ বদলে যাবে। নতুন দিগন্তের ছোঁয়া লাগবে।

গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জে স্মার্ট সিটি এবং তুরাগ ওয়াটার বেজড সিটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে রাজউক। এরই মধ্যে চীনের একটি কোম্পানি এসব প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ (ফিজিবিল্যাটি স্টাডি) শেষ করেছে। এসব প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছিল রাজউক। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব প্রকল্পের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করতে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। রাজউক থেকে এসব প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়নি।

পরবর্তীতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে চারটি শহর গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি পরে চারটি এলাকা পরিদর্শন করে। এলাকাগুলো হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও ধামরাই উপজেলা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও নবাবগগঞ্জ উপজেলা।

জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানী সম্প্রসারণ করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ঢাকার পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে গড়ে তোলা হবে এসব প্রকল্প। মূলত রাজধানীতে জন ঘনত্বের চাপ কমাতেই এসব নতুন উপশহর গড়তে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে এখন চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। বাকি চারটারও সম্ভাব্যতা যাচাই শেষের পথে। প্রকল্পগুলো গতানুগতিক থেকে ভিন্ন ধরনের হবে। বদলে যাবে গোটা রাজধানীর অবয়ব। প্রচলিত প্লটের পরিবর্তে দেওয়া হবে ব্লকভিত্তিক বরাদ্দ। আবার শিক্ষার জন্য বিশেষ অঞ্চল করা হচ্ছে। নদীভিত্তিক একটি করা হবে। তার নাম দেওয়া হয়েছে তুরাগ ওয়াটার বেজড।

সভার কার্যপত্র সূত্রমতে, বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ প্রান্তে ঝিলমিল সংলগ্ন এলাকায় হচ্ছে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন। ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে রোডের পাশে নতুন উপশহরে থাকবে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়্যার হাউস, ব্যাংকপাড়া। উপশহরটিতে সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এক-একটি ভবনের উচ্চতা হবে কমপক্ষে ২০ তলা। প্রকল্প এলাকায় ২০ শতাংশ জায়গা রাখা হবে গ্রিন স্পেস ও জলাভূমি হিসেবে। এ ছাড়া মাঠ, বাজারসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে এই উপশহরে। এই উপশহরকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রাজউক। রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ঘোষণার পর এই প্রথম ব্লকভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিকমানের শহর গড়ার পরিকল্পনা করেছে রাজউক। উপশহরটির প্রধান লক্ষ্য কর্মসংস্থান।

পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণবঙ্গের কৃষিপণ্য সহজেই ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে। কাজেই ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের পাশে যদি একটি উপশহর গড়ে ওঠে, সেটি হবে দেশের বিজনেস হাব। এজন্য ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থের জোগান নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে চায় রাজউক। সেটি সম্ভব না হলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় কাজ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর থেকে সাত বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চায় রাজউক। এজন্য দেশি বড় আবাসন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হতে পারে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিজও দেওয়া হতে পারে।

দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করেই এই শহর গড়া হবে। সব সুযোগ হাতে রেখে প্রকল্প প্রস্তাব করবে রাজউক। তবে এখানে প্রচলিতভাবে সিঙ্গেল প্লট দেওয়া হবে না। এখানে থাকবে ব্লকভিত্তিক বড় বড় প্লট। বেশিসংখ্যক মানুষের বাসস্থানের জন্যই নেওয়া হয়েছে এ পদ্ধতি। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মানদণ্ড মাথায় রেখে আন্তর্জাতিকমানের শহর গড়ার ভাবনা থেকেই এটা হাতে নেওয়া হয়েছে। 

আরও জানা যায়, কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজায় ২ হাজার ২৮৭ একর জমিতে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পপত্র তৈরি করেছিল রাজউক। নতুন প্রকল্পপত্রে ঘরবাড়িগুলো বাদ দেওয়ায় এখন তা কমে ৯১২ একর নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৬ মৌজার পরিবর্তে এখন তিনটি মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হবে। মৌজা তিনটি হলো বেওথা, বাড়িলগাঁও ও তারানগর। প্লট হবে তিন হাজারের কাছাকাছি।

কেরানীগঞ্জে আগে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেটা এখন ছোট করে ফেলা হয়েছে। যেসব স্থানে ঘরবাড়ি আছে সেগুলো বাদ দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেসব ক্ষতিগ্রস্তের জন্য একটি অঞ্চল তৈরি করে প্লট দেওয়া হবে। এতে ওই এলাকার উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৌখিক নির্দেশনা পেয়েই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে রাজউক। এখন সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ডিপিপি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তারপর যাবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে। 

জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের পাশেই মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় জরিপ কাজ শেষ। এখানেও গড়ে তোলা হবে বিশেষ প্রকল্প। অত্যাধুনিক এই প্রকল্পে প্রাধান্য দেওয়া হবে স্থানীয়দের। বছর তিনেক আগে এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও করোনার জন্য অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। নতুন বছরেই সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে পরবর্তী ধাপের কাজ শেষ করা যাবে। রাজউকের পরিকল্পনা রয়েছে, নবাবগঞ্জ-দোহার-মাওয়া এলাকায় পদ্মা পাড়ে একটি প্রকল্প করার।

পূর্বাচলের দক্ষিণে হবে শিক্ষা জোন আর পূর্ব দিকে হবে আরেকটি আবাসন প্রকল্প। অন্যদিকে নতুন উপশহরে কত ব্লক হবে তা আরও পরে চূড়ান্ত হবে। উন্নত দেশের শহরগুলো যেভাবে গড়ে উঠেছে তার থেকে ভালো আয়োজন থাকবে সেখানে। তাতে এককভাবে কাউকে প্লট দেওয়া হবে না। এক বিঘার প্লট দিলে চারজনকে দেওয়া হবে। দুই বিঘার প্লট হলে আটজন পাবে। এটা করতে পারলে দেখা যাবে কোনো প্লট যদি ১২ জনকে দেওয়া হয় তাহলে সেই প্লটে সুউচ্চ ভবন বানানো যাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা