প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১১ পিএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৩ পিএম
রাজধানীর হাজারীবাগে বাবার আছাড়ে পাঁচ বছর বয়সি মেয়েশিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা লেগুনাচালক রাসেলকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার বিকালে বউবাজার খালপাড় এলাকার একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে মারা যায় শিশুটি। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ভাত খেতে না চাওয়ায় শিশুটিকে আছাড় মারে বলে জানিয়েছেন বাবা রাসেল। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রায়ই শিশুটিকে মারধর করতেন তার বাবা।
জানা গেছে, শিশুটির বাবা মো. রাসেল লেগুনাচালক, আর মা নাসিমা আক্তার গৃহিণী। এ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল জান্নাতুল।তাদের বাড়ি ভোলার পশ্চিম চরভুষণ এলাকায়। রাজধানীর হাজারীবাগে বউবাজার খালপাড় এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।
নিহত শিশুটির মামা রাহাত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রাসেলের স্বভাব ভালো ছিল না, নেশা করত।’
ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি, জান্নাতুল ঠিকমতো খাবার খায় না, মুখে খাবার নিয়ে বসে থাকে। এ কারণে রাসেল রাগান্বিত হয়ে তাকে থাপ্পড় মারে। এতে কান্নাকাটি করলে আবার তাকে তুলে আছাড় মারে। এতে পাশের দেওয়ালে মাথা ঠুকে গেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে জান্নাতুল। খবর পেয়ে পাশের বাসার ভাড়াটিয়া শিল্পী বেগম, শিশুটির মা নাসিমা বেগমসহ তাকে দ্রুত স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।’
জান্নাতুলকে উদ্ধার করা শিল্পী নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘বাসার দরজা বন্ধ করে শিশুটিকে মারধর করে রাসেল। এই কষ্টে শিশুটির মা নাসিমা ব্লেড দিয়ে নিজের বাম হাত কেটে ফেলে। ঘটনার পর থেকে বেশ কয়েকবার জান্নাতুলের বাবা বাসা থেকে বের হয়। ধূমপান করে আবার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যার পর আমার বাসার দরজার সামনে এসে খালা বলে ডাক দিয়ে চুপ হয়ে যায় (রাসেল)। তখন আমি এসে বলি, কী হয়েছে বাবা। কিন্তু কোনো কথা বলে না। এরপর কিছুক্ষণ পরে বলে, খালা একটু দেখেন তো, আপনার নাতিনকে (জান্নাতুল) মাইর দিছি, এজন্য আপনার বউমা হাত কেটে ফেলেছে। একটু ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান।’
‘এরপর আমি তাদের বাসায় গেলে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অনেক ডাকাডাকির পরে রাসেল দরজা খুলে দেয়। বাসায় ঢুকে দেখি, নাসিমার বাম হাত কাটা, আর মেয়েটি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। গলা পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। আর পাশে বসে নাসিমা কান্না করছে। আমি বাচ্চাটার ওই অবস্থা দেখে চিৎকার দিছি। পরে সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতুলকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেশী শিল্পী বলেন, ‘নাসিমার হাত নাসিমা নিজেই কেটেছে। বাচ্চার বাবা মেয়েটিকে মারধর করছে বলে, মেয়েটির মা বলে— তুই আমার মাইয়ারে মারোছ। আমার নিজের জীবন আমি নিজেই দিয়া দিমু। তখন হাতের কাছে ব্লেড ছিল, ব্লেড দিয়ে নিজের হাতে নিজে পোছ দেয় নাসিমা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটিকে প্রায়ই মারধর করত মাদকাসক্ত বাবা। দুই দিন আগেও মেয়েটির কানের নিচে আঘাতের চিহ্ন দেখে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন নাসিমা বলে, ওর বাবা ওকে মারছে।’
হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদির শাহ্ বলেন, ‘শিশুটির ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ বলেন, শিশুটির বাবা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা প্রক্রিয়াধীন ছিল।