প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৫১ এএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:০৪ এএম
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যে নির্দেশনা জারি করেছে তা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান করার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ বলছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ বক্তব্য জানায় ডিএমপি। এতে বলা হয়, পহেলা বৈশাখ বাংলা ও বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। সব ধর্মের মানুষের কাছে এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই উৎসব উদ্যাপনে থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক যেন এ দিনটি। বিশেষত দিনটি রঙিন হয়ে ওঠে বাঙালি পোশাকে-আশাকে, আয়োজনে এবং আপ্যায়নে। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলা সংস্কৃতির ধারক এ পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের ওপর উগ্রবাদী আঘাত এসেছে। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে সংস্কৃতিযাত্রা ব্যাহত করার। উগ্রবাদের এ ভয়াল থাবা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে বিভিন্ন সময় আক্রমণ করেছে, আঘাত করেছে সৃজনশীল ও সংস্কৃতিমনা মানুষদের।
এতে আরও বলা হয়, উগ্রবাদীদের এ নৃশংসতায় প্রাণ দিয়েছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, ব্লগারসহ মুক্তমনা এবং রুচিশীল ব্যক্তিত্ব। সর্বোপরি, জঙ্গি সংগঠনগুলোর টার্গেট হলো বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে দেশের মধ্যে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি যা তাদের কার্যক্রমে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। এ দেশে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে। পরে ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা হামলা, সিনেমা হলে বোমা হামলা, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার পর দেশে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় । এসব হামলায় অনেক মানুষের মূল্যবান জীবন হানি হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়েছে। হামলা প্রতিরোধ করতে ও জনগণের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন বহুজন ৷
বিগত সময়ে ১৯৯৩ সালে (১৪০০ বঙ্গাব্দ) বাংলা শতবর্ষ উদ্যাপনে বাঙালিদের এ আয়োজনে বাধাও প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু উগ্রবাদ দমনে বর্তমান সরকারের গৃহীত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা রোধে পুলিশ সব সময়ই তৎপর। প্রতিটি অনুষ্ঠানে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সদা সতর্ক থাকায় পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি হামলা বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতে পারেনি। বর্তমান সরকার সব সময় অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতি তার নিজস্ব আমেজে উদ্যাপন করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদীচীর মতো বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন সারা বছর যে অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে তার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তথা সরকার নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ও পেশাদারির সঙ্গে সেগুলো বিবেচনা করে থাকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই নববর্ষ উদ্যাপনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কর্তব্য। পুলিশের এ নিরাপত্তা কার্যক্রমে সব মানুষ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে এটাই কাম্য যেন আনন্দের এ অনুষ্ঠান বিষাদে পরিণত না হয়ে যায়।
ডিএমপি বলছে, নিরাপত্তাবিধানে প্রদত্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না মেনে তার বিরোধিতা করে অনুষ্ঠান করা খুবই দুঃখজনক এবং উদীচীর মতো প্রগতিশীল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছ থেকে যা কখনও কাম্য নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান আয়োজন ও সেখানে প্রদত্ত বক্তব্য খুবই হতাশাজনক। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। অতীতেও উদীচীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় উগ্রবাদী হামলার ইতিহাস রয়েছে বিধায় উদীচী তাদের নিজেদের ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবিষ্যতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রদত্ত বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা।