বেইলি রোডে আগুন
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৫ এএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৪ পিএম
বেইলি রোডের আগুনে স্ত্রী , দুই কন্যা ও পুত্রসহ নিহত হন সৈয়দ মোবারক। এই ছবি এখন শুধুই স্মৃতি। ছবি : সংগৃহীত
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। ঈদ এলেই মোবারক বিদেশ থেকে মাকে ফোন করে জানাত- ‘আম্মা সামনের বছর আপনার সঙ্গে ঈদ করব।’ সৈয়দ মোবারকের এমন ইচ্ছার কথাই জানালেন মা হেলেনা বেগম। সম্প্রতি বেইলি রোডের কোজি কটেজের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার মোবারক তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্রসন্তানসহ অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন।
‘আমি আমার বাপজানের লগে আর কোনো দিনই ঈদ করতে পারমু না, আমার জাদুর মুখটা আমি আর কোনো দিন দেখতে পারমু না।’ বলেই কাঁদছেন হেলেনা বেগম। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মোবারক, সেই যে বাড়ি ছাড়লেন তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মোবারকের একমাত্র সন্তান সৈয়দ আব্দুল্লাহকে আদর করে দাদি হেলেনা বেগম ডাকতেন ‘আমার শাহেনশাহ’। পরিবারের একমাত্র পুত্রসন্তান বলে দাদির কাছেও তার আদর ছিল বেশি। হেলেনা বেগম জানালেন, ‘আমার কলিজার টুকরা ‘শাহেনশাহ’, আমার নুর, আমার কাশপিয়া আর দাদুরে দেখতে আইত না। আমি কার লগে ঈদ করুম?’
মোবারক ২০২০ সালে দেশে ফিরেছিলেন মায়ের সঙ্গে ঈদ করবে বলে। সেবার করোনা মহামারির কারণে মায়ের সঙ্গে তার আর ঈদ করা হয়নি। মোবারকের মা জানান, ছেলে সেবার সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, ‘আম্মা আমি ইতালি থেকে আসছি, ইতালিতে করোনা খারাপ অবস্থা, আমি আসলে আপনার সমস্যা হবে।’ সেবারও তার মায়ের সঙ্গে ঈদ করা হয়নি।
আজন্ম সংগ্রামী সৈয়দ মোবারক ছিলেন পরিবারের মেজো সন্তান। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বেসরকারি স্বল্প বেতনের চাকুরে বাবা যখন চার সন্তানের শিক্ষা ও ভরণপোষণ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন, ঠিক তখনই প্রবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মোবারক।
একবার যে সন্তান কাজের জন্য বাড়ি ছেড়ে বের হয়, মৃত্যুর আগে তার আর ফেরা হয় না। প্রচলিত এই কথাটি অমোঘ সত্য হয়ে এসেছিল সৈয়দ মোবারকের জীবনে। তার মা জানলেন, ‘ছেলে তো অনেক আগে বিদেশ গেছে, শেষ কবে আমি কাউছারের (মোবারকের ডাকনাম) লগে ঈদ করছি আমার মনে নাই।’
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মোবারক ও তার পরিবারকে মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে, যেখান থেকে আর ফেরা যায় না, কেউ ফেরে না। ফিরবে না মোবারকও। মায়ের সঙ্গে তার আর কোনো দিন ঈদ করা হবে না। মায়ের শূন্য বুকের এই হাহাকার কেবল অশ্রু হয়ে নেমে আসবে ধরণীতে। হেলেনা বেগম আর কোনো কথা বলতে পারলেন না। চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন। তার চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরছিল প্রিয় সন্তান, পুত্রবধূ, নাতি, নাতনি হারানোর শোকের অশ্রু।