× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রবীণ নিবাস

স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা

ফারহানা বহ্নি

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৭ পিএম

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৬ পিএম

প্রবীণ নিবাসে ইফতারসামগ্রী সামনে নিয়ে বসে আছেন নুরুল আলম। প্রবা ফটো

প্রবীণ নিবাসে ইফতারসামগ্রী সামনে নিয়ে বসে আছেন নুরুল আলম। প্রবা ফটো

ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। তবে সেই আমেজ নেই রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘে। যদিও যত্ন করেই প্রবীণদের ইফতারের আয়োজন করেন লাকি। দীর্ঘ বছর ধরে তাদের জন্য রান্নাবান্না করে আসছেন তিনি। প্রবীণ নিবাসে গিয়ে দেখা গেল, সেদিনের ইফতারিতে রয়েছে চিড়া, দুধ এবং কলা। লাকি জানালেন, সবার জন্যেই মোটামুটি একই ইফতারসামগ্রী দেওয়া হয় এখানে। 

ঘুরতে ঘুরতে দেখা গেল, ঘুম থেকে উঠেছেন ৮০ বছরের নূরুল আলম। ইফতারের সময় কখন যে পেরিয়ে গেছে বুঝতে পারেননি। রুমের ভেতরে গেলে তিনি বললেন, ‘এখানে আজ তিন মাস হলো আছি। কখন কীসের সময় হয়ে যায়, তা ঠিক বলতে পারি না।’

ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি সেদিন এক বাটি হালিমও পেয়েছেন নূরুল আলম। খেতে খেতে বলছিলেন, ‘পাশের রুমে যিনি থাকেন, হালিমটুকু তিনিই দিয়েছেন। খেতে খুব ভালো লাগছে। তবে উনার সঙ্গে কথা হয়নি। নামটাও ভুলে গেছি। মাঝেই মঝেই খাবার পাঠান।’

প্রবীণ নিবাসে বসবাসকারীরা এভাবেই একজন আরেকজনকে প্রতিবেশীর মতো খাবার দিয়ে থাকেন। নূরুল আলমের মতো ৩৬ জন প্রবীণ থাকেন এ ভবনে। তারা একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেও মাঝেমধ্যেই হারিয়ে যান পুরোনো দিনের স্মৃতির ভেতর। অনেকে আবার স্মৃতিচারণ করতে করতে অতীতকে হাতড়ে বেড়ান, পুরোপুরি খুঁজে পান না।

নিজেই নিজের জায়গা খুঁজে নিয়েছেন নূরুল আলম 

পেশায় ব্যাংকার ছিলেন নূরুল আলম। প্রবীণ নিবাসের খরচ বাবদ পেনশনের বিশ হাজার টাকা দেন নিয়মিত। ছেলে-মেয়েরা সহযোগিতা করে কি না এমন প্রশ্নে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘ওরা কেন টাকাপয়সা দেবে? আমার টাকা আছে না! বাড়ি নেই, গাড়ি নেই। এখানে থাকি এখানে খাই এটাই তো ভালো। পেনশনের যে টাকা পাই, ওদেরও দিই সেখান থেকে।’ 

নূরুল আলমের দুই ছেলের একজন থাকেন কানাডাতে, অন্যজন বর্তমানে ব্র্যাকের শিক্ষক, তবে অচিরেই পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন। নূরুল আলমের স্ত্রীর একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে তিনি এখন বলতে গেলে কানাডাতে ছেলের কাছেই থাকেন সারা বছর। অবশ্য মাঝেমধ্যে দেশেও আসেন। তবে নূরুল আলমের ইচ্ছে নেই বিদেশে থাকার। তাই নিজেই নিজের জায়গা তিনি খুঁজে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুইবার ভিসা হয়েছে। দুইবারই শেষ সময় আর যাইনি আমি। মন সায় দেয়নি।’ 

কিছুক্ষণের মধ্যেই রাতের খাবার নিয়ে আসেন এখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা। খাবার নিতে নিতে অতীতের গল্পে ডুবে যান নূরুল আলম। নিজের স্ত্রীর যত্ন করে খাওয়ানোর সেই স্মৃতি তিনি এখনও ভুলতে পারেন না। গল্পে গল্পে বলেন, ‘চাঁদপুরে ছিলাম চাকরির সুবাদে। সেখানে কাজের লোকও ছিল। কিন্তু আমার স্ত্রী কখনও তাদের রাধা খাবারদাবার খেতে দিত না। যত্ন করে রান্না করে সে আমাকে নিজে খাওয়াত। এখন তো কিডনি নষ্ট! আমাকে এখন অন্যের হাতের রান্না খেতে হয়।’ 

একা একা ইফতার করাটা অভ্যেস হয়ে গেছে বলে নূরুল আলম জানান, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পাল্টাবে, সেটাই স্বাভাবিক। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে থাকা হয় না। তবে এ কথা বলা যাবে না, সন্তানরা বাবা-মাকে ভালোবাসে না। ছেলে শিক্ষক। অনেক বছর হয়ে গেছে, এখন ওর প্রমোশনের জন্য পিএইচডি তো করতে হবে। আর সেজন্যে তাকে তো বাইরে যেতে হবে। দোষ তো তার না। দোষটা আমাদের সিস্টেমের। বরং সব মানুষের দায়িত্বই রাষ্ট্রকে নিতে হবে।’ 

মেয়েদের বিয়ে দিয়ে প্রবীণ নিবাসে সীমা 

দুই মেয়ের জননী সীমা জামান মেয়েদের বিয়ে দিয়ে থিতু হয়েছেন এই নিবাসে। রমজানে ইফতার কথা আসতেই তিনি বলেন, ‘এই সময়ে মেয়েদের যা যা খেতে ভালো লাগে, সেসব বানাতাম। সবার পছন্দের খাবার করতাম; পেঁয়াজু , আলুর চপ, বেগুনি বানাতাম। সেই স্মৃতি তো মনে পড়লে খারাপই লাগে। তবে জীবন ঠিকই কেটে যায়। একা লাগলেও কিছু করার নেই। এখানে ভালো-মন্দ মিলিয়ে অনেকেই আছেন। যতটা সময় পাই দোয়াদরুদ পড়ি।’

নিজের স্বামীর প্রসঙ্গ আসতেই তিনি অশ্রু ভারাক্রান্ত চোখে বলেন, ‘একটা সময় ওর চাকরির সূত্রে নানান জায়গায় ঘুরেছি। এখন তো আর ও নেই। বাকিটা জীবন দীর্ঘ মনে হয়।’ 

ইফতারের পর আরাম করে চা খান নাদিরা

পড়তে ভালোবাসেন নাদিরা বেগম। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি শৌখিন। এই প্রবীণ নিবাসের তিনি অনেক পুরাতন বাসিন্দা। এখানে এখন আর খুব-একটা সমস্যা হয় না তার। মেয়ের বয়স যখন দশ বছর আর ছেলের মাত্র আট, তখনই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। তারপর আর ছেলেমেয়েদের কাছে পাননি। বাকিটা জীবন মা ও ভাইয়ের সঙ্গেই কাটিয়ে দিয়েছেন। নাদিরা বেগম বলেন, ‘ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। মাঝে মাঝে আসে। এ ছাড়া আর কেউ আসে না। আমার ঈদ, রমজান সব এখানেই। এভাবেই বেশ ভালো কেটে যায় সময়।’

হাসতে হাসতে বলছিলেন নাদিরা, ‘ইফতারের পর একটু চা খাই আরাম করে। এতেই আমার ভালো লাগে। সঙ্গে কিছুটা হরলিক্স আর গুড় মিশিয়ে দিই। আর ইফতারে লেবুর শরবত। তারপর নামাজ পড়ে একটু পড়াশোনা করি। জীবন এখানেই বেশ কেটে যাচ্ছে আমার ‘ 

অনেকেরই আত্মীয়স্বজন আসেন ঈদে

প্রবীণদের সম্পর্কে বাইগামের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মহসীন কবির জানান, ঈদের সময় তাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন আসে। তা ছাড়া এখানে থাকতে থাকতে তারা অভ্যস্তও হয়ে যান। মাঝে মাঝে পুরোনো দিনের কথা মনে করে অনেকে অস্থির হয়ে পড়েন। তবে সময়ের সঙ্গে সেটাও ঠিক হয়ে যায়। রোজার সময় একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয়। কারণ বয়সজনিত কারণে সবারই স্বাস্থ্যের কিছুটা সমস্যা হয়। খাবারের মেন্যুটা তাই খেয়াল রাখতে হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা