শিকলে বেঁধে তরুণীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:২৪ পিএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৪ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় শিকলে বেঁধে রেখে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। হোতা ব্যারিস্টার মাসুদ দেশে নাকি বিদেশে অবস্থান করছেন, সে বিষয়ও স্পষ্ট হতে পারেনি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এদিকে প্রথম দফায় রিমান্ড শেষে গ্রেপ্তার চার আসামিকে ফের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কথিত ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশে তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করতেন সালমা। ওই তরুণীর অজান্তে মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করে তা পাঠানো হতো মাসুদের কাছে। পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে এসব ভিডিও ধারণ করে সেগুলো আদান-প্রদান করা হয়। আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তাদের মোবাইল ফেলে দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েব করতেই সেটগুলো ফেলে দেওয়া হয়। তবে কোথায় ফেলেছে, সে তথ্য দিচ্ছে না। তাদের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো জব্দ করা গেলে এবং মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হলে এ ঘটনার জট খুলবে বলে আশা করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ জানায়, তিন দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার আসামি সান (২৬), রকি (২৯), হিমেল (২৭) এবং তাদের সহায়তাকারী সালমা ওরফে ঝুমুরকে আদালতে তোলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না পাওয়ায় তাদের আবার পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান।
পুলিশ জানায়, সালমা একসময় একটি সুপারশপে চাকরি করতেন। বিয়ের পর তার স্বামী ভারতে চলে যান। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি সেখানে থাকেন। সালমা ওই তরুণীর সঙ্গে মাসুদের ভাড়া করে দেওয়া বাসায় থাকতেন। এজন্য থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি তাকে মাসে চার হাজার টাকা বেতন দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন মাসুদ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা ব্যারিস্টার মাসুদ সম্পর্কে ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। সে খুব কৌশলে সবকিছু হ্যান্ডেল করেছে। আসামিরা দাবি করেছে, মাসুদ বিদেশে আছে। তবে আমাদের ধারণা সে দেশেই আছে।‘
তিনি বলেন, ‘মাসুদ আসলে ব্যারিস্টার কি না, সেটা যাচাই-বাছাই করতে হবে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া তরুণী ও মামলার আসামি সালমার ফোন উদ্ধার করা গেলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা ফোন দুটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফারুকুল জানান, আসামিদের কাছ থেকে মাসুদ সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের ফের দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এমন নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যিনি জড়িত এবং যার নাম বলা হচ্ছে, তাকে যেকোনো উপায়ে খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তরুণীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তার মোবাইল ফোনটি আসামিরা গায়েব করে ফেলেছে। আমরা সেই মোবাইলটি উদ্ধার করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। মোবাইলটি উদ্ধার করতে পারলে আমরা এই মামলাসংশ্লিষ্ট আরও অনেক তথ্য খুঁজে পাব।’
শনিবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ট্রিপল নাইনে অভিযোগ পেয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর বাসার চতুর্থ তলা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন ওই তরুণী। পরে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, নবীনগরে সালমার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে ৫ মার্চ থেকে তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই তিন যুবকের ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তাও করেন সালমা। তারা ওই তরুণীকে ২৫ দিন ধরে হাত, পা শিকলে বেঁধে এবং মুখে স্কেচটেপ লাগিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়।