আসকের বিজ্ঞপ্তি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ২২:১৩ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ২২:১৯ পিএম
প্রতীকী ফটো
গত তিন মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম সহিংসতা হয়েছে অন্তত ২৬৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ২৩ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৩৬৮ জন। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা। তাছাড়া সাংবাদিক নিপীড়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদানের মতো ঘটনা ঘটেছে এ সময়। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)। সোমবার (১ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত তিন মাসে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হন মোট ১৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, এবং সিলেট বিভাগে ১ জন। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন করে কারাগারে পাঠানোর পরে ঢাকা ও চট্রগ্রামে দুইজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৩টি বাড়িঘরসহ দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। এছাড়া ১৫টি প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা
গত তিন মাসে যৌন হয়রানি কেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৭৯ জন নারী-পুরুষ, যাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ৫৫ জন নারী ও ২৪ জন পুরুষ। এর মধ্যে বখাটে কর্তৃক লাঞ্ছিত ৪৫ জন, বখাটেদের উৎপাতকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহত হয়েছেন ২৬ জন। যৌন হয়রানির কারণে ১ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটে কর্তৃক ৪ জন পুরুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১১৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১ জন নারী। এছাড়া ৩১ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৩৭ জন নারী। এর মধ্যে ৬৫ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪৯ জন নারী।
এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৩ জন নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬ জন নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২ জন নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮ জন। এ সময়কালে মোট ৭ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শিশু নির্যাতন ও হত্যা
দেশের বিভিন্ন স্থানে গত তিন মাসে মোট ৩২৫ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১৩৯ শিশু এবং ১ জন ছেলেশিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ২৭ শিশু, বিভিন্ন সময়ে মোট ৩২ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বলাৎকারের শিকার হয়েছে ১৪ ছেলে শিশু এবং বলাৎকারের চেষ্টা করা হয়েছে ১ জন শিশুকে।
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি
গত তিন মাসে ৮১ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। সীমান্ত সংঘাত: সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এর গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ৬ বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪ জন। অন্যদিকে মিয়ানমার সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে ১ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১ জন নিহত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসক মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আসক রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের সব ধরনের মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায় বিচার দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।