শেকলে বেঁধে রেখে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৪ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪০ পিএম
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে তরুণীকে ২৫ দিন ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাতভর টানা অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন-তরুণীর বর্তমান প্রেমিক সান ও তার দুই বন্ধু হিমেল, রকি এবং সহায়তাকারী নারী সালমা ওরফে ঝুমুর।
পুলিশ বলছে, ওই তরুণীর সঙ্গে মাসুদ নামে এক আইনজীবীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার অনুপস্থিতিতে সান নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কারণে আইনজীবী মাসুদ ক্ষিপ্ত হন। তাই প্রতিশোধ নিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সান ও তার বন্ধুদের দিয়ে এই তরুণীকে শেকলে বেঁধে পৈশাচিকভাবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়। এতে সহযোগিতা করেন সালমা। তিনি নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও ধারণ করে বিদেশে অবস্থানরত মাসুদের কাছে পাঠাতেন।
সোমবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন,বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকতেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হয়। মাসুদের সঙ্গে তরুণী লিভটুগেদার করত।
পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। একপর্যায়ে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন ওই তরুণী। যার সব খরচ বহন করতেন মাসুদ। পরে সালমার মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাসুদ।
পরবর্তীতে মাসুদ তরুণীকে শায়েস্তা করতে তার বর্তমান প্রেমিক সানের সঙ্গে হাত মেলান। সালমাকে দিয়ে তাদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাসুদের নির্দেশনায় কাজ করান। তরুণীর রুমে বসানো হয় গোপন ক্যামেরা। বিভিন্ন সময় সান ও তার বন্ধু হিমেল তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সেই দৃশ্য ধারণ করে পাঠানো হতো মাসুদের কাছে।
ডিসি তেজগাঁও আরও বলেন, গোপনে ভিডিও করার বিষয়টি তরুণী জেনে যাওয়ায় তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। শুরু হয় শেকলে বেঁধে নির্যাতন। হাত-পা ও মুখ বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালাতেন সান ও তার বন্ধুরা, যার প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিও ধারণ করে পাঠানো হতো মাসুদের কাছে।
২৫ দিন পর যেভাবে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার
ডিসি আজিম বলেন, গত ২৯ তারিখ রাত ৯টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে অভিযান চালিয়ে তরুণীকে শেকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তরুণীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। সে ঘুমিয়ে গেলে বাইরে যান সালমা, সান ও অন্যরা। কিছুক্ষণ পর তরুণীর ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে চিৎকার দিলে পথচারীরা ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে জানায়। পুলিশ গিয়ে নবীনগরের একটি বহুতল ভবনের চারতলা থেকে তাকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজিমুল হক বলেন, তরুণীকে নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ও ছবি সালমার মোবাইলে। কিন্তু সে মোবাইলটি লুকিয়ে ফেলেছে। সেটি পেলে পৈশাচিক নির্যাতনের আসল তথ্য ও ভিডিওর গন্তব্য সম্পর্কে জানা যাবে।