প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৪:৫২ পিএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৬:২৮ পিএম
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায়। প্রবা ফটো
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশে সবচেয়ে বেশি নিম্নস্তরের সিগারেট ব্যবহৃত হয়। দাম কম হওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ ও তরুণ-তরুণীরা এ সিগারেট বেশি ব্যবহার করে। হারের দিকে এটি ৭০ ভাগের বেশি। তাই এ সিগারেটের দাম শতাংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি বাড়াতে হবে (প্রায় ৩৩ শতাংশ)। তাতে করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে ১০ হাজার কোটি টাকা। এতে করে ১৫ লাখ মানুষ ধূমপান ছাড়বে ও ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম, অনিমা মুক্তি গমেজ, ড. আওলাদ হোসেন, ড. শ্রী বীরেন শিকদার, ড. জান্নাত আরা হেনরী, নাজমা আক্তার প্রমুখ।
ড. আতিউর রহমান বলেন, সিগারেটকে দুষ্প্রাপ্য করে দিতে হবে। যাতে করে তরুণরা এটি গ্রহণ করতে না পারে। কেননা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ তথা ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ দেশে ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সি নাগরিকদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৮ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ২০১৮ সালে দেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সে বছর তামাক ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর রাজস্ব এসেছিল ২২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এটি সে বছর স্বাস্থ্যজনিত কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল তার ৭৫ শতাংশেরও কম।
সভায় ড. আতিউর রহমান চার স্তরের সিগারেটে কর অরোপের প্রস্তাব করেন। তারমধ্যে নিম্নস্তরে সিগারেটে খুচরা মূল্য ৪৫ থেকে ৬০ টাকা করতে হবে। বর্তমান সম্পূরক শুল্ক হার ৫৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ শতাংশ করতে হবে। তাতে সম্পূরক শুল্ক ২৬ দশমিক ১০ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ টাকা করতে হবে। এতে করে প্রাপ্ত কর ৩৩ দশমিক ৩০ থেকে বেড়ে ৪৭ দশমিক ৪০ টাকা হবে।
মধ্যম স্তরের সিগারেটে খুচরা মূল্য ৬৭ থেকে ৮০ টাকা করার প্রস্তাব করেন তিনি। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখতে হবে। তাতে সম্পূরক শুল্ক ৪৩ দশমিক ৫৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫২ টাকা হবে। এতে করে প্রাপ্য মোট কর ৫৪ দশমিক ২৭ থেকে বেড়ে ৬৪ দশমিক ৮০ টাকা হবে।
উচ্চস্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১৩ থেকে ১৩০ টাকা করতে হবে। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব রাখেন তিনি। এই খুচরা মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাতে প্রাপ্য সম্পূরক শুল্ক ৭৩ দশমিক ৪৫ থেকে বেড়ে ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ টাকা হবে। এতে করে প্রাপ্য মোট কর ৯১ দশমিক ৫৩ থেকে বেড়ে ১০৫ দশমিক ৩০ টাকা হবে।
আর প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটে খুচরা মূল্য ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করতে হবে। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখা হোক। এই খুচরা মূল্যবৃদ্ধিতে প্রাপ্য সম্পূরক শুল্ক ৯৭ দশমিক ৫০ থেকে বেড়ে ১১০ দশমিক ৫০ টাকা হবে। এতে করে প্রাপ্য মোট কর ১২১ দশমিক ৫০ থেকে বেড়ে ১৩৭ দশমিক ৭০ টাকা হবে।
ড. আতিউর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমে আসবে। ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান ছাড়বে। এতে ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১১ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যরোধ করা সম্ভব হবে। সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ১০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। এতে করে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।
আলোচনা সভায় উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদত হোসেন সিদ্দিকী প্রমুখ।