মালিক সমিতির অভিযোগ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩২ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:২৫ পিএম
সোমবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন। প্রবা ফটো
বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় আগুনের ঘটনার পর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। চাঁদা না দিলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নত্তোর পর্বে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
ইমরান হাসান অভিযোগ করেন, সমিতিকে পাশ কাটিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রেস্তোরাঁ করার লাইসেন্স দিচ্ছে। এই সুযোগে বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা চাঁদাবাজি শুরু করেছে। তারা মালিকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, নবাবী ভোজের মালিক ও সমিতির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন প্রমুখ।
ইমরান হাসান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর (বিবিএস) হিসাবে সারা দেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজারের অধিক। এ সেক্টরে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলে কর্মরত রয়েছে ৩০ লাখ মানুষ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পের ওপর নির্ভশীল প্রায় ২ কোটি মানুষ। দেশে রেস্তোরাঁ শিল্পের পরিমাণ ৩ দমমিক ৭৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এই সেক্টরে বিনিয়োগ ২ লাখ কোটি টাকা। ৬০ হাজার সদস্য আছেন।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিবের অভিযোগ, সন্ত্রাসী কায়দায় রেস্তোরাঁগুলো সিলগালা করা হচ্ছে। কেন সিলগালা করছে তার কোনো কাগজপত্রও দেওয়া হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলেই অনেকে ব্যবসা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে ব্যবসা করে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। আমরা সে পথে না গিয়ে সঠিকপথে ব্যবসা করতে চাই।
তিনি বলেন, সারা দেশে মোট ৮০০ রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ২০০ রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
করপোরেট কোম্পানিগুলো এ সেক্টরকে ধ্বংস করে নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় অভিযোগ করে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, করপোরেটরা সবকিছু নিজের আয়ত্তে নিতে চায়। আগুনের প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করে এ সেক্টরকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। এ পর্যন্ত কোনো সরকারি দল, সুশীল সমাজ, সরকারি কর্মকর্তারা কোনো ধরনের কথা বলছেন না।
সরকার অভিযান না করে কী করতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। রেস্তোরাঁগুলো যদি ঝুঁকিমুক্ত হয় তাহলে তাদের ব্যবসা করতে দিতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের ব্যবসা করতে হলে ১২ জায়গা থেকে সার্টিফিকেট আনতে হয়। বর্তমানে রাজউকের ব্যর্থতার কারণে ঢাকা শহর জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। রাজউক সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান।
তার তথ্যমতে, এ পর্যন্ত অভিযানে ১ হাজার ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ জন ছিল রেস্তোরাঁর কর্মচারী। গ্রেপ্তারদের ১৯ জনের এখনও জামিন হয়নি। তা ছাড়া এ পর্যন্ত ৫৭৫টি রেস্তোরাঁকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, দেশে খাওয়া নিয়ে ছিনিমিনি চলছে। এ অবস্থায় আমরা কোথায় যাব? আমাদের ব্যবসা করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি পদে প্রতিবন্দ্বকতা তৈরি করছে। এ অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
দেশে ১০টি কোম্পানি এলপিজি বিক্রি করছে। তারা কোনো ধরনের সিলিন্ডার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কথা বলছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রুফটপে রেস্তোরাঁ অবৈধ হলে আগে কেন ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হলো এমন প্রশ্ন রেখে নবাবী ভোজের মালিক কামরুল হাসান বলেন, ১২টি লাইসেন্স থাকার পরও আমার রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দিয়েছে। আমরা শতভাগ চেষ্টা করি সৎভাবে ব্যবসা করতে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা সেই সুযোগ দিচ্ছে না। ৫ মার্চ থেকে আমার রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দিলেও এখনও খুলে দেয়নি। কোনো কাগজপত্রও দেওয়া হয়নি।
রেস্তোরাঁ সেক্টরের চলমান সমস্যার সমাধান ও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে বুধবার (২০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইমরান হাসান।