প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৬ পিএম
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৪ পিএম
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতির বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাঙালি অস্তিত্বের উৎস বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রবা ফটো
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণই বালাদেশের সংবিধানের ভিত্তি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণে এদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, পাশের দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে, এমন কী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তাদের সঙ্গেও কী ধরনের সম্পর্ক হবে, তার সব দিক নির্দেশনা ছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যে সংবিধান আমরা পাই, সেই সংবিধানের ভিত্তি হলো আমাদের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতির বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাঙালি অস্তিত্বের উৎস বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের সভাপতি ডা. নুরুল ইসলাম হাসিব, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খান, রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী ও বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর (অব.) আফিজুর রহমান।
উপাচার্য বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে যেখানে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেখানেই দেখা যায় বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় সেই পদক্ষেপ কোন না কোনভাবে গ্রহণ করেছিলেন।
বিগত নির্বাচনে একটি শক্তিধর রাষ্ট্র সব ষড়যন্ত্র করার পরেও তারা সফল হতে পারেনি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ এ দেশের সব মানুষের অন্তরে আছে। বিধায় অন্যরা যত প্রলোভনই দেখাক তাদের মানুষ বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে না বিধায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন টিকে আছে, বাংলাদেশ টিকে আছে, আওয়ামী লীগ টিকে আছে, অসাম্প্রদায়িকতা টিকে আছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের শিক্ষানীতি করার জন্য ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে কমিশন করেন। ড. কুদরত-ই-খুদা যে শিক্ষানীতি দিয়েছিলেন যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন এবং সেই শিক্ষানীতি প্রয়োগ হতো, তাহলে বাংলাদেশ আজকে যে অবস্থানে আছে তার বহু আগেই ‘সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক যে স্থিতিশীলতা’ সেটি অর্জন করতো। শিক্ষাক্ষেত্রেও সিঙ্গাপুরের যে অগ্রগতি সেটি বহু আগেই বাংলাদেশ অর্জন করতো। কিন্তু ঘাতকরা সেটি হতে দেয়নি। ঘাতকরা চেয়েছে বাংলাদেশ হবে পাকিস্তানের মতো অনেকটা মৃত অকার্যকর রাষ্ট্র। সে জন্যই ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহকর্মীদের হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলকে হত্যা করার পায়তারা করে ৷
প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের ধমনিতে নদীর মতো বয়ে চলছেন। নদী নিজে মারা যায় না। নদীকে আমরা মাঝে মাঝে মেরে ফেলি। বঙ্গবন্ধুকেও সে রকম অভিশপ্ত বাঙালি স্বপরিবারের মেরে ফেলেছে। তবে যারা মেরেছিল তাদের আমি বাঙালি বলতে চাই না। কারণ তারা চেতনায় বাঙালি হতে পারেনি বলেই বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মানুষকে মেরে ফেলেছিল। এরপর ২১ বছর বঙ্গবন্ধুকে আমাদের সামনে থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির ধমনীতে বঙ্গবন্ধু নদীর মতো বহমান ছিলেন বলে ফিরে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, সৃষ্টিশীল মানুষরা কোনো সময় মরেন না। বঙ্গবন্ধুও মরেন নাই। তিনি আমাদের অস্তিত্বের মধ্যেই আছেন। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে কিন্তু বাঙালি হয় না। হাজার বছরের বাঙালি জাতির যে ইতিহাস সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু পর্যন্তে এলে দেখা যায় স্বার্থকতা কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই হয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র কিন্তু তার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে আমাদের অস্তিত্বের উৎস হিসেবে স্বরণ করতে হবে, ধারণ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বঙ্গবন্ধু এখনও আমাদের কাছে অতিপ্রয়োজনীয়। একটি জাতিকে তিনি মুক্ত করেছেন অপরিসীম দুঃখ কষ্ট ও ত্যাগ সহ্য করে। অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে তিনি বাঙালির স্বাধীনতা এনেছেন। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। সাড়ে সাত কোটি নির্যাতিত, বৈষম্যের শিকার হওয়া মানুষকে তিনি সুসংগঠিত করেছেন। একটি জাতির স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা তিনি মুখে বলেছেন এমনটা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তিনি সংবিধানেও সংযোজন করেছেন।