প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪ ২২:১১ পিএম
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি রাজীবের পরিবার।
চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে ‘ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায়’ রাজীব আহমেদ নামে এক স্থপতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্থপতি রাজীব।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলে ধরেন রাজীবের স্ত্রী সারাওয়াত ইকবাল এবং তার বড় ভাই চিকিৎসক আরেফ উদ্দিন আহমেদ।
রাজীবের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত বলেন, ‘শমরিতা হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এম ইউ কবীর চৌধুরী আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রাজীব অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং সেখান থেকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।’
রাজীবের পরিবারের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেড় বছর ধরে ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন রাজীব। ২২ জানুয়ারি নিয়মিত ফলোআপের অংশ হিসেবে ওই চিকিৎসকের কাছে গেলে আগের ওষুধগুলোর সঙ্গে নতুন করে অ্যাসিট্রেটিন ১০ এমজি ক্যাপসুল দিনে একটি করে খেতে দেন। ওই ওষুধ খাওয়া শুরুর পর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজীবের জ্বর ও পেট ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা বাড়তে থাকলে ৬ ফেব্রুয়ারি ডা. কবীর চৌধুরীর কাছে যান। তবে তিনি সেসময় না থাকায় রাজীবকে স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
রাজীবের স্ত্রী সারাওয়াত বলেন, ‘ইমার্জেন্সিতে বলা হয়- নতুন ওষুধের কারণে লিভারে রিঅ্যাকশন হয়েছে। রাজীবকে জেনারেল সার্জনকে দেখাতে বলা হয়। এরই মধ্যে ব্যথা আরও বাড়লে তাকে কবীর চৌধুরীর কাছে আবার নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শমরিতায় শিরাপথে দুটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্কয়ারে আটটি অ্যান্টিবায়োটিক মিলিয়ে মোট ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় তাকে। এগুলোর ব্যাপক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়ায় বোধহয় রাজীবের অকাল মৃত্যু হয়েছে।’
সারাওয়াত অভিযোগ করেন, ‘শমরিতায় লিভার এনজাইমগুলোর মাত্রা অনেক বেশি থাকার পরও তারা লিভার ফেইলিওরের ডায়াগনসিসকে আড়াল করে অন্য ডায়াগনসিস উল্লেখ করে। স্কয়ার হাসপাতালে রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরেও কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিদর্শনে আসেননি। সুনির্দিষ্ট ডায়াগনসিস না করে কালক্ষেপণ করা হয়।’
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমঅ্যান্ডডিসি) অভিযোগ দেওয়ার কথা জানান সারাওয়াত।
বিচার চায় ‘স্থপতি সমাজ’
এদিকে বুয়েটের ২০০৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজীব আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছেন স্থপতিরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বুয়েটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে স্থপতিদের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বুয়েটের সাবেক ও বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতা ও রাজীবের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি মাহফুজুল হক জগলুল বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখেছি, রাজীবের চিকিৎসায় মেডিকেল নেগলিজেন্সির প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তার মেডিকেল রিপোর্টিংয়ে অসামঞ্জস্য ও অধারাবাহিকতা পাওয়া গিয়েছে।’
একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি এর প্রতিকার না পাই, আমরা কিন্তু ঘরে বসে থাকব না, পথে নেমে আসব। আমরা স্থপতি সমাজ এর সুবিচার গ্রহণ করেই ঘরে ফিরবে। কেননা ওর দুটি নিষ্পাপ কন্যাসন্তানের সামনে আমরা তাহলে দাঁড়াতে পারব না।’